পাথরঘাটা(বরগুনা): বরগুনার পাথরঘাটা আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার খানের বিরুদ্ধে তার স্কুলের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভণে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ওই প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আরো পড়ুন: প্রাথমিকে বদলি চলতি বছরের জন্য শেষ
জানা যায়, গত রোববার (২৩ এপ্রিল) ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বিদ্যালয় ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পাথরঘাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন আকনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এর আগে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুফল চন্দ্র গোলদারের কাছে জবানবন্দি দেন ওই এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তার বাবা। বিভিন্ন সময় ওই ছাত্রীকে উপহার দেওয়া মোবাইলে আপত্তিকর খুদে বার্তা পাঠানো-এসব প্রধান শিক্ষকের সামনেই ইউএনওকে দেখিয়েছেন ওই ছাত্রী।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করছেন। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চঞ্চল্যের সৃস্টি করেছে।
ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, প্রাথমিক স্কুল পাস কারার পর আমার মেয়েকে আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছিলাম। নবম শ্রেণিতে ওঠার পর ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার নানা কৌশলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে আমার মেয়ের সঙ্গে এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। গত ১৩ মার্চ স্কুলে শিক্ষা সফরের কথা বলে আমার মেয়েকে বরিশালে নিয়ে দোয়েল আবাসিক হোটেলে রাত যাপনও করেন। বরিশাল থেকে ফেরার পর মেয়ের শারীরিক অসুস্থতা দেখে তার কাছে জানতে চাইলে মেয়ে সব ঘটনা খুলে বলে। মানসম্মান রক্ষায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বারকে আমার মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি বাল্যবিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে এ ব্যাপারে সব ঘটনা জানিয়ে বিদ্যালয় ব্যাবস্থাপনা কমিটির কাছে বিচার চেয়ে দরখাস্ত করেছি।
এদিকে বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ায় ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ওই শিক্ষকের পক্ষে ছাত্রীকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে সুরাহা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে বুধবার বিদ্যালয়ের জরুরি সভায় ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
পাথরঘাটার ইউএনও সুফল চন্দ্র গোলদার জানান, ঘটনা সত্য। ভিকটিম মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) সব প্রমাণাদিসহ আমার কাছে জবানবন্দিতে উপস্থাপন করেছে। শিক্ষার্থীর (ছাত্রী) বয়স কম হওয়ায় আইনগতভাবে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়নি। তবে শারীরিক ও মানসিক দিক দেখিয়ে গত ১৯ মার্চ আমার কাছে বিয়ের অনুমতি নিতে আসছিলেন প্রধান শিক্ষক ও তার ছাত্রী। আমি তাদের অনুমতি দেইনি। বিষয়টি বরগুনা জেলা প্রসাশককে (ডিসি) অবহিত করে বিদ্যালয় কমিটির সভাপতিকে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও পাথরঘাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন বলেন, আমরা এ বিষয়ে বিদ্যালয় কমিটিসহ সব শিক্ষকদের নিয়ে বুধবার (২৬ এপ্রিল) জরুরি সভা করেছি। ওই সভায় প্রধান শিক্ষকের ব্যাপারে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইলে কল করা হলে তিনি মোবাইলটি রিসিভ করে তার সহকারী শিক্ষক মো. আলামিন ফোরকানকে ধরিয়ে দেন। ফোরকান বলেন, স্যার লজ্জিত তাই আপনার সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানিয়েছেন।
পাথরঘাটা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি তরিকুল ইসলাম রেজা বলেন, যে বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে ছাত্রীর নিরাপত্তা নেই সেসব কুলাঙ্গার শিক্ষকদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার।