থিম্পু থেকে ফিরে বলেছেন ওবায়দুল কাদের
স্টাফ রিপোর্টার ॥ চার দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগে যেসব গাড়ি চলাচল করবে সেগুলোর নিজ নিজ দেশের নিয়ম অনুযায়ী শুল্ক নির্ধারণ করা করা হবে। বাংলাদেশও নিজস্ব আইন অনুযায়ী এ ট্যাক্স নির্ধারণ করবে। মঙ্গলবার বিকেলে ভুটান থেকে ফেরার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
কাদের বলেন, ট্যাক্স না দিয়ে কোন যানবাহনই বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করবে না। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী এই চার দেশের যেসব রুট দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে তা পর্যায়ক্রমে ফোর লেনে উন্নীত করা হবে। যানবাহনের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান সড়ক ও সেতুমন্ত্রী। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সড়ক সচিব এম এন সিদ্দিক, অতিরিক্ত সচিব ফারুক জলিল প্রমুখ।
চার দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ শুরু করতে চলতি বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের একটি পরিকল্পনা প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ সময় অবকাঠামো ও পদ্ধতিগত বিষয় নিয়ে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে রয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। আগামী অক্টোবরে চার দেশের মধ্যে মোটর শোভাযাত্রার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের ওড়িশার ভুবনেশ্বর থেকে চার দেশের আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থার উদ্বোধন হতে পারে। এরপর তা পর্যায়ক্রমে চালু হবে। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও ভারতের এই কানেক্টিভিটিতে চাইলে অন্য কোন দেশও যুক্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোন বাধানিষেধ নেই। তবে চুক্তি শর্ত অনুযায়ী নতুন দেশসমূহকে চলতে হবে। আমরা মনে করি, এই চুক্তি এশিয়ার দেশসমূহের জন্য উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। সর্বোপরি বাংলাদেশের জন্য এই চুক্তিটি অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ উন্নয়নের দিক থেকে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
মন্ত্রী বলেন, চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ঢাকা-থিম্পু, সরাসরি বাস সার্ভিস চালু, ঢাকা-শিলং গুয়াহাটি বিদ্যমান বাস সার্ভিস সম্প্রসারণ করে ভুটানের সামত্রুপ জনকার পর্যন্ত চালু এবং ভুটান কর্তৃক সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভুটানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ থেকে খাদ্য, গার্মেন্টস, নির্মাণ সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি এবং বাংলাদেশের ফলমূল, বিদ্যুত রফতানির প্রস্তাব দেয়ার কথা জানান মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এর আগে ১৭ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুর একটি হোটেলে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। চুক্তিতে চার দেশের সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রীরা সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী, যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক-লরি ও ব্যক্তিগত গাড়ি এই চার দেশের মধ্যে চলাচল করতে পারবে।
চুক্তির বিস্তারিত ॥
শুধু স্থলবন্দর দিয়েই এই যাতায়াত হবে। ভবিষ্যতে নতুন কোন বন্দর নির্মিত হলে সেটিও চুক্তির আওতায় আসবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করছে। নতুন চুক্তি হলে এক দেশ অন্য দেশের ভূমি ব্যবহার করে তৃতীয় দেশেও যেতে পারবে। অনেকটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদলে চুক্তি।
খসড়া রূপরেখা চুক্তি অনুসারে যানবাহনের বৈধ মালিকানা, ফিটনেস ও ইন্স্যুরেন্সের হালনাগাদ দলিল থাকতে হবে। চালকের স্থানীয় কিংবা আন্তর্জাতিক যেকোন এক ধরনের লাইসেন্স থাকলেই চলবে। আর যাত্রীর থাকতে হবে বৈধ ভ্রমণ দলিল। প্রয়োজন হলে পথে যেকোন দেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ যানবাহন পরিদর্শন করতে পারবে। নিষিদ্ধ কিংবা তালিকাভুক্ত স্পর্শকাতর মালামাল বহন করা যাবে না। ব্যক্তিগত, যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের অনুমতি পাওয়ার জন্য আলাদা আলাদা ফরম পূরণ করতে হবে। বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত যানের দীর্ঘমেয়াদী অনুমোদন লাগবে। আর ব্যক্তিগত গাড়ির অনুমতি হবে সাময়িক এবং তা তাৎক্ষণিকভাবে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ দিতে পারবে।
কোন যান কিভাবে চলবে ॥
ব্যক্তিগত গাড়ি অনিয়মিত যান হিসেবে বিবেচিত হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যারা যেতে চান, তাদের ৩০ দিন পর্যন্ত ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হবে। যাত্রার যেসব উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে পর্যটন, তীর্থযাত্রা, বিয়ে অনুষ্ঠান, চিকিৎসা, শিক্ষা সফর, রেলস্টেশনে যাওয়ার জন্য যাত্রা। এ ধরনের যাত্রীদের যাত্রাকালে জ্বালানি ভরে যেতে হবে। কোন শুল্ক না দিয়েই নিতে পারবেন প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ। পথে জ্বালানির দরকার হলে ভর্তুকিবিহীন দামে জ্বালানি নিতে পারবেন। দুর্ঘটনায় পড়লে নিজ নিজ দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই গাড়ি নিয়ে যতবার ভ্রমণ করবেন, ততবার অনুমোদন নিতে হবে।