নাসিরুল ইসলাম:সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে চালু হয়েছিল চাকরিতে কোটা পদ্ধতি। তবে চাকরির নিয়োগে এখন কোটারই আধিপত্য। সম্প্রতি কোটা পদ্ধতির পক্ষে ও বিপক্ষে আন্দোলন চলছে রাজপথে। কয়েক বছর ধরেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় আসে। তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিমত, কোট বাদ দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। তার ওপর কোটা পদ্ধতিতেই রয়েছে বৈষম্য। বৈষম্য দূর করতে ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতেই যে কোটা, তাতে যদি বৈষম্য থাকে তাহলে সংস্কার ছাড়া কোনও সমাধান হবে না। আর এ সংস্কার হতে হবে তথ্যভিত্তিক।
কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী নেতারাও বলছেন, যে কোটা পদ্ধতি প্রচলিত আছে তাতে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই বৈষম্য দূর করতে সংস্কার জরুরি।
কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তান/নাতি-নাতনি কোটা ৩০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা পাঁচ শতাংশ। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে। তবে সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, বিভিন্ন করপোরেশন ও দফতরে সরাসরি নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলা কোটা পুনঃনির্ধারণ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৯৭২ সালে কোটা চালু করেছিলেন উপহার হিসেবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যার পর এই কোটা বাতিল করা হয়। পরবর্তী ২৪ বছর মুক্তিযোদ্ধাদের এই কোটা দেওয়া হয়নি। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য আবার কোটা চালু করেন। এছাড়া সমাজের পিছিয়ে পড়াদের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু আছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা নির্ধারণ করা হয়।
সব দেশে কোটা পদ্ধতির সংস্কার চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার মতো অবস্থা এখনও হয়নি। সমাজে বৈষম্য কমাতেই কোটা পদ্ধতি। তা যদি বৈষম্য তৈরি করে, তাহলে তা সংস্কার জরুরি। বর্তমানে তথ্যভিত্তিক একটি রিভিউ হতে পারে। কোন গোষ্ঠী কতটা এগিয়ে গেছে, কোন গোষ্ঠী কতটা পিছিয়ে রয়েছে এসব বিবেচনা করে কোটার অনুপাত কমিয়ে আনা যেতে পারে।’
কোটার অপব্যবহারের বিষয়ে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘কোটার কতটা অপব্যবহার হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধাদের কত জনের সার্টিফিকেট ভুয়া তা দেখে একটা রিভিউ করা প্রয়োজন। এসব কারণে কোটা সংস্কার দরকার। প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটা থাকতেই হবে। তা না হলে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। নারীরা পিছিয়ে আছে, তাদের কোটা থাকতে হবে। তবে কত শতাংশ পাবে তা রিভিউ করতে হবে। কোটা পদ্ধতি থাকায় কিছু কর্মকর্তা, কিছু মানুষ অসৎভাবে এটির ব্যবহার করছে। তার জন্য কোটা পদ্ধতি দায়ী নয়। তবে সেটি দেখা উচিত। তাই তথ্যভিত্তিক সংস্কার করতে হবে।’
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহেদুল আনোয়ার লিয়ন বলেন, ‘কোটা পদ্ধতি সংস্কার না করায় আমরা নিষ্পেষিত হচ্ছি। কোটার অপব্যবহার হচ্ছে। বিগত সময়ে কোটা সংরক্ষণের কারণে ২৮তম বিসিএসে ৮১৩টি, ২৯তম বিসিএসে ৭৯২টি, ৩০তম বিসিএসে ৭৮৪টি, ৩১তম বিসিএসে ৭৭৩টি আর ৩৫তম বিসিএসে ৩৩৮টি পদ খালিই থেকেছে। অথচ মেধাবী ছিল না তাতো নয়। আমি মনে করি, কোটা সংস্কার না হওয়ায় জনপ্রশাসন যোগ্য ও মেধাবী অনেক প্রার্থী থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
শাহেদুল আনোয়ার লিয়ন আরও বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কোটা রাখার পক্ষে সরকারের কাছে দাবি করেছি। সরকার যৌক্তিকভাবে এটি নিরূপণ করে সংস্কার করবে, আমরা সেই অপেক্ষায় রয়েছি।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ পাস করা চাকরিপ্রার্থী শেখ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘কোটা পদ্ধতি সংস্কার প্রয়োজন, কারণ এটার অপব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া ৫৫ শতাংশ কোটার প্রয়োজন নেই। কোটার কারণে কিছু পদ ফাঁকা থাকলেও মেধাবীরা চাকরি পাচ্ছে না। এটি সংস্কার করে কোন কোটা কতটা থাকা প্রয়োজন তা বের করতে হবে। কোটা পদ্ধতিতে কোনও অনিয়ম করার সুযোগ থাকলে তা বন্ধ করতে হবে।’
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড এর সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর মুক্তিযোদ্ধাদের এই কোটা বন্ধ করে।