চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবী

Image

করোনা মহামারির কারণে প্রায় পাঁচ মাস সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে জনবল চাহিদা থাকলেও নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি। বন্ধ ছিল সব চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া। এখন বর্তমান অবস্থা অনেক ভালো। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আবার অর্থনীতি ও চাকরির বাজারকে চ্যালেঞ্জিং করে ফেলছে। সে জন্য চাকরির বিজ্ঞপ্তি অনেক দেওয়া হলেও চাকরিপ্রত্যাশীদের মনে তেমন আশার সঞ্চার সৃষ্টি করছে না।

করোনার কারণে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হওয়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদগুলো পূরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ বাস্তবায়নের সরকার কাজ করছে। সরকারপ্রধান এ জন্য চেষ্টা করে চলছে। প্রধানমন্ত্রীকে এ জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তরগুলো সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া সহজকরণ করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে প্রধানত বিসিএস ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার পদের জন্য লোকবলও নিয়োগ দেয় সরকার।

এসব পদে নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে চূড়ান্ত চাকরি পাওয়া পর্যন্ত প্রায় দুই থেকে তিন বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ও লেগে যায়। নতুন চেয়ারম্যান দীর্ঘ প্রক্রিয়া আরও সহজ করার বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও চাকরিপ্রত্যাশীদের দীর্ঘদিনের দাবি, আবেদনের বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেখতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে অনেক দিন ধরে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা দাবি জানিয়ে আসছে। এ ছাড়া এই দাবিতে প্রায়ই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নামে শিক্ষার্থীরা বা চাকরিপ্রত্যাশীরা মানববন্ধনও করে।

চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের দাবিতে তাদের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে। ওই সময় আমাদের অনেক নেতা বলেছেন, তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক এবং চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি দ্রুত সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা হবে।

এমনকি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গত নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ রয়েছে। আমরা সাধারণ নাগরিকরা মনে করি দাবিটা প্রাসঙ্গিক এবং যৌক্তিক। কারণ করোনার কারণে চাকরির বিজ্ঞপ্তি ছিল না এবং অনেক চাকরি প্রার্থীদের আবেদনের বয়স শেষ হয়ে গেছে। শুধু তাদের কথাই বলছি না। সব শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের ওপর করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

উচ্চ মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন কিন্তু প্রলম্বিত হয়েছে। আমরা শিক্ষকরা চেষ্টা করে সম্পূর্ণ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারি নাই। অর্থাৎ তা নিয়ে কিছুটা জটিলতা হয়েছে। সরকারি সব চাকরির নিয়োগের আবেদনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমায় ৩ দফায় মোট ৩৯ মাস ছাড় দেওয়া হয়। বিসিএস ছাড়া সরকারি সব চাকরির ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য ছিল। বয়সে এ ছাড়ের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩০ জুন। বয়স ছাড়ের বিষয়টি খুবই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ছিল এবং এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তবে আমি মনে করি, এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হবে না। কারণ যে শিক্ষার্থীর ২৫ বছরে তার স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার কথা ছিল, করোনার কারণে তা আর সম্ভব হবে না। তার মানে এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন শেষ করতে ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় বেশি লাগবে।

অর্থাৎ যদি করোনা না থাকত তাহলেই তারা ৫ বছর চাকরির জন্য সময় পেত, এখন সেই সময় কমে কারও জন্য ৪ বছর কিংবা কারও জন্য ৪ বছর ছয় মাস সময় থাকবে সরকারি চাকরিতে আবেদনের জন্য। তাই করোনাকালীন সময়কে ট্রানজিশন পিরিয়ড হিসেবে চিন্তা করে সরকারি চাকরির আবেদনের বয়স ৩৫ করা হোক। এখন নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করলে শিক্ষার্থীরা অনেক খুশি হবে। এতে বর্তমান সরকারকে চাকরিপ্রত্যাশীরা সমর্থন বেশি করবে।

কারণ সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাহিদা এবং এটি সময়োচিত সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছি। তবে চাকরিতে আবেদনের বয়স বৃদ্ধি করা হলেও অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা যাবে না। কারণ অবসরের বয়স বৃদ্ধি করা হলে ভবিষ্যতে বেকারত্বের হার বেড়ে যেতে পারে। সর্বশেষ ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে শুধু অবসরের বয়স ৫৭ থেকে বাড়িয়ে সাধারণের জন্য ৫৯ বছর আর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৬০ বছর করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো দাবি-দাওয়া ছিল না।

উল্লেখ্য, বিশ্বের অনেক দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৫৫ বছর পর্যন্ত রয়েছে। এমনকি কোথাও কোথাও ৫৯ বছর পর্যন্ত। এ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০, শ্রীলঙ্কায় ৪৫, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫, ইতালিতে ৩৫, ফ্রান্সে ৪০। এমনকি অনেক দেশে আগ্রহী ব্যক্তিরা অবসর গ্রহণের ঠিক আগের দিনও সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারেন। তবে আমরা কেন পারব না। শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়টি বাস্তবায়ন করবেন বলে আশা করছি।

ড. মো. শফিকুল ইসলাম: সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।