চট্টগ্রামে গ্যাস সংকটের ফলে বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের ভাড়া। এতে বিপাকে পড়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আসা শিক্ষার্থীরা। চালকদের দাবি, তারা গ্যাস পাচ্ছেন না; ফলে তাদের বাধ্য হয়েই তাদের বাড়তি অর্থ দিয়ে তেল কিনে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বেশি ভাড়া নিয়েছেন ব্যাটারীচালিত গাড়ির চালকরাও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত ১২ তারিখ থেকে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে চরম গ্যাস সংকট। এতে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন সিএনজি-চালিত অটোরিকশার চালকরা। গ্যাস চালিত বাস ও প্রাইভেট কারগুলোরও একই দশা।
ফলে চট্টগ্রামের রাস্তায় কমেছে গাড়ির সংখ্যা। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি আর অকটেনে ঝুঁকছেন চালকরা। এতে বাড়তি টাকা খরচ হওয়ায় বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে যাত্রীদের।
এদিকে মঙ্গলবার (১৬ মে) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) স্নাতক প্রথম বর্ষ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের গাড়ি সংকটে ভুগতে হয়েছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই পরীক্ষার্থীদের গুণতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া।
‘আমি চট্টগ্রামের থাকি; হাটহাজারী থেকে চবিতে পরীক্ষা দিতে এসেছি। আমার থেকে ১২০ টাকার সিএনজি ভাড়া ২০০টাকা নিয়েছে’—বলছেন রাকিব নামের এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী।
ইব্রাহিম খলিল নামে আরেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ১০ টাকার গাড়ি ভাড়া তেলের গাড়ির অজুহাতে ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে ৩০ টাকা আদায় করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে পাইপলাইনে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। তবে, সরজমিনে চট্টগ্রামের একাধিক স্থান ঘুরে দেখা গেছে গ্যাস ফিলিং স্টেশনগুলোতে সিএনজির দীর্ঘ লাইন। সিনএজিগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করা হলেও পর্যাপ্ত সরবরাহ এখনো নেই।
গ্যাস নিতে সারাদিন ফিলিং স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি; এখানে কেউ গ্যাস পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না। ফলে, অনেকে বাধ্য হয়ে অকটেন দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে— জানিয়েছেন জাহেদ নামে একজন সিএনজিচালক।
এনাম নামের আরেক সিএনজি চালক জানান, ‘গ্যাসের সংকট। তেল দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। পরীক্ষায় সময় ১০-১৫টাকা যে যা দিছে নিছি। আমাদের অনেকে গ্যাসের জন্য লাইন ধরে আছে। গ্যাস পাচ্ছে না। তাই আমরা তেমন ভাড়া মারতেও পারছি না। ক্যাম্পাসে আজকে সারাদিন বাইরের (ভাটিয়ারী রোডের) লাইনের গাড়িওয়ালারা ভাড়া মারছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে দ্রুতযান স্পেশাল বাস সার্ভিস চালু রেখেছে চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ। সকাল ৭ থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মোট ৬টি বাস ষোলশহর রেল স্টেশন থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এছাড়াও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ও যাতায়াতের সুবিধার্থে শাটলের শিডিউল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রক্টর নুরুল আজিম সিকদারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে শাটলের সংখ্যা বাড়িয়েছি। ভাড়া বৃদ্ধির যে বিষয়টি বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। শুনেছি গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় রোডে ২০১৪ সালে রিকশা এবং সিএনজি ভাড়ার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) স্নাতক প্রথম বর্ষ ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা গতকাল মঙ্গলবার (১৬ মে) শুরু হয়। এদিন চবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন দুই শিফট করে চার শিফটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এবার ক্যাম্পাসের বাইরে পরীক্ষার কোনও কেন্দ্র রাখা হয়নি। ‘এ’ ইউনিটে রয়েছে বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদ।
এবার মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৭৪ হাজার ৬৫৯ জন। দুই দিনে প্রতি শিফটে পরীক্ষার্থী ১৮ হাজার ৬শত ৬৪ জন। প্রথম শিফটের পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করবে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। ওএমআর ফরম বিতরণ করা হবে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে। প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে সকাল ১১টায়। পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর ১২টায়। আর দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করবে বেলা ২টা ১৫মিনিটে। ওএমআর ফরম বিতরণ করবে বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে। প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে। পরীক্ষা শেষ হবে বেলা ৪টা ৩০ মিনিটে।
এবার চবিতে প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বেন প্রায় ৪১ জন ভর্তিচ্ছু। চার ইউনিট ও দুই উপ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৪ হাজার ৯২৬টি আসনের বিপরীতে চূড়ান্তভাবে আবেদন করেছেন ২ লাখ ৫৬ জন ভর্তিচ্ছু। এছাড়াও ভর্তি বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী আগামী ১৮ মে ‘বি’ ইউনিট, ২০ মে সি ইউনিট, ২২ মে ডি ইউনিট, ২৪ মে বি-১ উপ ইউনিট এবং ২৫ মে ডি-১ উপ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।