খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) চলমান একটি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে উপাচার্য ফায়েক উজ্জামানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি খুইয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. নাছিমা রহমান ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক আতোয়ার রহমান।
গত সপ্তাহে ইউজিসির সচিব ড. মোহাম্মদ খালেদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাদের চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে অপসারণ করা হয়। এই দুই কর্মকর্তাকে গত ৩ মে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছিল ইউজিসি। এ ঘটনায় ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. আখতার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে কর্তৃপক্ষ।
কমিটির সদস্যরা ৯ মে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিন তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পান। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইউজিসির পূর্ণ কমিশন সভায় ওই দু’জনকে চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এর সত্যতা স্বীকার করেন।
ইউজিসি সূত্র জানায়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান একটি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে উপাচার্য ফায়েক উজ্জামানের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ায় নাছিমা রহমানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির মোট চার কর্মকর্তাকে গত ৩ মে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অন্য তিনজন হলেন_ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনু বিভাগের যুগ্ম প্রধান স্বপন কুমার ঘোষ, উপ-প্রধান ওমর মো. ইমরুল মহসিন এবং ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আতোয়ার রহমান।
এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি ও মাদ্রাসা) অশোক কুমার বিশ্বাসকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যুগ্ম প্রধান স্বপন কুমার ঘোষ, উপ-প্রধান ওমর মো. ইমরুল মহসিনকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়। ভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তা হওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণকারী বিভাগকে এ তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
এর ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হয়, যা বর্তমানে চলমান আছে। অন্যদিকে, ইউজিসির এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. আখতার হোসেনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। এ কমিটির বাকি দুই সদস্য ছিলেন কমিশনের অপর সদস্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ আলী মোল্লা এবং গবেষণা ও প্রকাশনা শাখার পরিচালক সামছুল আলম। এরপর এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়। এরই পরিণতিতে চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত আসে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চাকরিচ্যুত ইউজিসির এই দুই কর্মকর্তাসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইএমইডির মোট সাত কর্মকর্তা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের তদারকির জন্য কথিত এ ‘সম্মানী’র অর্থ না পেয়ে খুবি উপাচার্যকে হুমকি দিয়েছিলেন। এ টাকা না দিলে তারা পরবর্তী কিস্তির ১৬ কোটি টাকা আটকে দেবেন বলে হুমকি দেন। দুই দফায় দুই বছর মেয়াদ বাড়ায় ৮৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই প্রকল্পের কাজ গত ৩০ জুন শেষ হয়ে গেছে।
উপাচার্য ফায়েক উজ্জামান অভিযোগ করেন, “প্রকল্পের কাজ আর মাত্র দুই মাস বাকি থাকতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনু বিভাগের যুগ্ম প্রধান স্বপন কুমার ঘোষ ও উপ-প্রধান ওমর মো. ইমরুল মহসিন, ইউজিসির ড. নাছিমা রহমানসহ মোট সাত সদস্যের একটি কমিটি ‘মধ্যবর্তী মূল্যায়নের জন্য সম্মানী হিসেবে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। তা না হলে তারা এই প্রকল্পের শেষ কিস্তির ১৬ কোটি টাকা ছাড় না করার হুমকি দেন।” তিনি বলেন, প্রকল্পের দুই মাস বাকি থাকতে মধ্যবর্তী মূল্যায়ন হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয় নয়। সম্মানী বাবদ যে ১০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে, সে ধরনের কোনো অভিজ্ঞতা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই।