নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৭ , ২০২১
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সবকিছু শুরু হলেও এখনো ওইভাবে শুরু করা যায়নি দেশের শিক্ষাকার্যক্রম।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিমাপ করা গেলে করোনা মহামারীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত হিসেবে হয়তো শিক্ষা খাতই বিবেচিত। যদিও কেবল টাকার অঙ্কে শিক্ষার লাভক্ষতির সেই হিসাব মেলানো যাবে না।
তাই শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি সরকারও। তবে এখন সেই বাধাও কাটতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে।
মাধ্যমিকস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার প্রস্তুতি নিতে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে গত ২২ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেয়।
সরকারের নির্দেশনা মেনে এরই মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষাকার্যক্রম শুরুর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বৈঠক করেছেন গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে।
এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তাদের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম শুরু করেছে। সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই।
খুলনা নাসের মেডিকেল কলেজের নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয়প্রধান মোহসীন আলী ফরাজীর একমাত্র সন্তান ফারহান সাদিক ঢাকার একটি বেসরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।
জানালেন, অনলাইনে ক্লাস করলেও শ্রেণিকক্ষের লেখাপড়ার মতো ততটা কার্যকর না। এতে পড়ালেখার পাশাপাশি সারাক্ষণ চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি থাকায় সন্তানের মানসিক ও শারীরিকভাবে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ নিয়ে তারা এতদিন বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি শিক্ষাকার্যক্রম শুরুর ঘোষণায় স্বস্তি ফিরেছে তাদের মাঝে।
এদিকে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নিতে পারলেও ঝুলে আছে পরীক্ষা নেওয়া। ফলে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশ চাপ ছিল।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান পারভীন আক্তার জেমি বলেন, ‘আমরা অনলাইন ক্লাসে শেষ করে বসে আছি। কিন্তু পরীক্ষা নিতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের অনেকে উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে অনার্স ফাইনাল ইয়ার এবং মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। সরকারি নির্দেশনা এলেই পরীক্ষা নেওয়া শুরু হবে।’
পারভীন আক্তার জেমির মতে, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিণত বয়সের এবং তারা নিজেদের ভালো-মন্দ বোঝে। সেহেতু আপাতত ক্লাস শুরু না করলেও অন্তত পরীক্ষাটা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন টেলিফোনে বলেন, ‘পরীক্ষার মাঝেই করোনার হানায় বেশকিছু পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো আমরা সম্পন্ন করেছি। পাশাপাশি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা শিক্ষাকার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। মঙ্গলবার রাতেও বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির বৈঠক হয়েছে দ্রুত শিক্ষাকার্যক্রম শুরুর বিষয়ে।’