: বাগেরহাটে কোচিং সেন্টারের প্রশ্নপত্রে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক বেল্লাল হোসেনকে চাকরিচ্যুতির সুপারিশ করা হয়েছে। ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকালে তদন্ত কমিটির প্রধান বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ আমজাদ হোসেন প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন হাওলাদারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেয়।
বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বিষয়ে কোচিং সেন্টারে মডেল টেস্টে নেওয়া প্রশ্নপত্রেই বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পর মঙ্গলবার পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের দুই কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে অভিভাবক ও সচেতন মহলের মাঝে। তারা স্কুলের সুনাম ও শিক্ষার মানকে সমুন্নত রাখতে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ আমজাদ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক শেখ মো. বেল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পেয়ে আমরা তদন্ত শুরু করি। তদন্তের সময় কমিটির সদস্যরা প্রথমে একাধিক অবিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে আমরা শিক্ষক বেল্লাল হোসেনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। অবিভাবক, শিক্ষার্থী ও অভিযুক্ত শিক্ষকের বক্তব্যে অনুযায়ী ওই শিক্ষক যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত তা তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। আমরা স্কুলের সুনাম, শিক্ষার মানকে সমুন্নত রাখতে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছি।’
প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন হাওলাদার বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে আগেই তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষ করে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে স্কুলের শিক্ষক কাউন্সিল কমিটির জরুরি সভা আহ্বান করা হয়। ওই সভা থেকেও খণ্ডকালীন আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক শেখ মো. বেল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে জোর দাবি তোলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এবং শিক্ষক কাউন্সিল কমিটির রেজুলেশন অনুযায়ী শিক্ষক বেল্লাল হোসেনের চাকরিচ্যুতির জন্য স্কুল ব্যবস্থপনা পর্ষদের সভাপতি বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের কাছে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। তিনিই পরবর্তি পদক্ষেপ নেবেন।’
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে প্রভাতি শাখার খণ্ডকালীন শিক্ষক শেখ মো. বেল্লাল হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে বারবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন সহকারী শিক্ষক শেখ মো. বেল্লাল হোসেন স্কুল শেষে নিজ বাড়িতে কোচিং সেন্টার খুলে তাতে তৃতীয় শ্রেণির বেশকিছু শিক্ষার্থীকে ব্যাচ করে পড়ান। প্রায় ১৫ দিন আগে ওই শিক্ষক তার কোচিং সেন্টারে পড়া শিক্ষার্থীদের ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বিষয়ে মডেল টেস্ট পরীক্ষা নেন। গত ৯ ডিসেম্বর তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বিষয়ে দেওয়া বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।