নিজস্ব প্রতিবেদক :কোচিং ব্যবসার আড়ালে ডিজিটাল জালিয়াতি ও প্রশ্ন ফাঁস করে যাচ্ছেন ভার্সিটি ভর্তি কোচিং সেন্টার ইউসিসি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)-এর ভিসি ও সিনেটের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ইউসিসির জড়ির থাকার কথা জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে বিভিন্ন প্রমাণসহ তিনি এ কথা বলেন।
তিনি জানিয়েছেন,“ভর্তি পরীক্ষার জালিয়াতিতে ইউসিসি কোচিং সেন্টার জড়িত, আটককৃত শিক্ষার্থীরা পুলিশকে এ তথ্য জানিয়েছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা তুলে ধরে বলেন,“বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি চলাকালে নয়টি কেন্দ্র থেকে ১৪ জনকে আটক করা হয়। তারা বিশেষ ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে পরীক্ষার হলে জালিয়াতির চেষ্টা করে। এ সময় তাদের আটক করে পুলিশে দেয়া হয়।”
আরেফিন সিদ্দিক শিক্ষাবার্তাকে বলেন,“আটককৃত শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইউসিসি কোচিং সেন্টার নাম বলেন।” সিনেট অধিবেশনে তাদের জবানবন্দির ভিডিও চিত্র দেখানো হয়েছে।
আরেফিন সিদ্দিক বলেন,“বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা জালিয়াতি হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ হচ্ছে। এই জালিয়াতি রোধে আমরা সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না করলেও ঘুরিয়ে স্বীকার করেছে ইউসিসি কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,”কোচিং সেন্টারে ৪শ শিক্ষক পড়ান। তাদের যে কেউ এটা করতে পারেন। সেজন্য কোচিং সেন্টার দায়ী নয়।”
কোচিং সেন্টারের শিক্ষক জড়িত থাকলে কোচিং সেন্টার কি দায় এড়াতে পারে- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,“অবশ্যই দায় এড়াতে পারে না। তবে আমরাও জড়িত শিক্ষকদের খুঁজে বের করবো।”
কামাল পাটোয়ারী বলেন,“সরকার তদন্ত করতে পারে, আমরা তাদের সাহায্য করব। ইউসিসি’ও জানতে চায় কোন ব্যাক্তি এই ঘৃর্নিত কাজটি করেছে। আমরা শুনতে পেরেছি মাসুম নামের একজন শিক্ষক প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত। আমরা তাকে খুঁজছি। তবে জানতে পেরেছি, এই নামে কোন শিক্ষক বর্তমানে আমাদের কোচিং সেন্টারে নেই।”
ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ, নিউমার্কেটসহ ছয়টি থানায় ১৩টি মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশ্নপত্র ফাঁস ছাড়াও ছাত্র নির্যাতেনের অভিযোগ রয়েছে ইউসিসি’র বিরুদ্ধে।
কেবল প্রশ্নপত্র ফাঁস নয়, গত বছরের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানের ‘বদনাম’ করায় এক ছাত্রকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। নির্যাতিত ছাত্র রকিবুল তখন অভিযোগ করেছিল, ‘ইউসিসির মান ভালো নয়’ বলায় ওই ছাত্রকে নির্যাতন করা হয়েছে। সে কোচিং সেন্টারটির ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের প্রধান ক্যাম্পাসে কোচিং করতেন।
ছাত্রটি আরো জানিয়েছিল, ইউসিসির পরিচালক কামাল উদ্দীন পাটোয়ারীসহ ওই কোচিং সেন্টারের কয়েকজন শিক্ষক তাকে নির্যাতন করে। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি অভিযোগও দায়ের হয়েছিল।
এবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের জালিয়াতির সাথে জড়িত আটক শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ ইউসিসিতে কোচিং করত। তারা ইউসিসির শিক্ষকদের সঙ্গে চুক্তি করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজ থেকে আটক সাদিয়া সুলতানা শিক্ষাবার্তাকে জানান,ইউসিসির মাসুম নামের এক শিক্ষকের সঙ্গে চার লাখ টাকায় তার সাথে চুক্তি হয়। বিনিময়ে তিনি আমাকে ঢাবিতে চান্স পাইয়ে দেয়ার নিশ্চয়তা দেন।