বছরের পর বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানে থেকে কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের অভিযোগে রাজধানীর ২৪টি সরকারি বিদ্যালয়ের ৫২২ জন শিক্ষককে বদলির সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য ও নিয়োগ বাণিজ্যের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগ তদন্ত শুরু করে দুদক।
দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল এই তদন্ত শেষে বুধবার কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করে।
দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, “সরকারি নীতিমালা মোতাবেক শিক্ষকদের এক কর্মস্থলে তিন বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হলেই তাদেরকে অন্যত্র বদলি করার নির্দেশনা রয়েছে।”
দুর্নীতি দমন কমিশন
শিক্ষকদের বদলি না করার পেছনে রাজনৈতিক চাপ, তদবির ও অনৈতিক আর্থিক লেনদেন রয়েছে উল্লেখ করে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু সংখ্যক শিক্ষক কোচিং বা প্রাইভেট বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বছরের পর বছর ঢাকার একই বিদ্যালয়ে অবস্থান করছেন।
যেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলির সুপারিশ করা হয়েছে-
গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ৩২ জন, মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৬ জন, ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাই স্কুলের ১৭ জন, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৪ জন, শেরেবাংলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৭ জন, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত হাই স্কুলের ২৫ জন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩১ জন, তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২১ জন, গণভবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৪ জন, মিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯ জন, নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯ জন, নারিন্দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩১ জন, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ২৯ জন, আরমানিটোলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ২১ জন, ঢাকা গভর্নমেন্ট মুসলিম হাই স্কুলের ৯ জন, ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ জন, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩২ জন, বাংলাবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২২ জন, টিকাটুলী কামরুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩০ জন, তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৮ জন, শেরেবাংলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৪ জন, ধানমন্ডি কামরুন্নেছা সরকারি বিদ্যালয়ের ৭ জন, ধানমন্ডি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ জন ও নিউ গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুলের ৭ জন।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এক কর্মস্থলে বছরের পর বছর থাকার ফলে ওই শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ানোর নামে কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন এবং শিক্ষার্থীদের সেখানে পড়তে বাধ্য করা হয়।
কোচিং বাণিজ্য বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে ছাত্র সংগঠনগুলো (ফাইল ছবি)
দশ বছরের বেশি কোনো শিক্ষক এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে তাকে বিভাগের বাইরের বিদ্যালয়গুলোতে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে দুদকের প্রতিবেদনে।
এছাড়া পাঁচ বছরে বেশি সময় কর্মরত শিক্ষকদের ঢাকা নগরীর বাইরে এবং তিন বছরের বেশি সময় এক বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকলে অন্য বিদ্যালয়ে বদলির সুপারিশ করেছে দুদক।
এছাড়া সাত জেলা শিক্ষা অফিসারকে জেলায় দায়িত্ব না দিয়ে ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও বরিশালের সাত বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে।
এসব জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বদলি নিশ্চিতের পাশাপাশি ভবিষ্যতে তাদেরকে শিক্ষক হিসেবে পদায়ন না করতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এরা হলেন- তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহরীন খান রূপা, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মেহেরুন নেছা, মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নুরুন নাহার, ধানমণ্ডি কামরুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নাসরিন আক্তার, গাজীপুরের কালিগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের লুবনা আক্তার, চট্টগ্রামের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শাহিদা আক্তার ও বরিশালের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবা খানম।