অনলাইন ডেস্ক,৮ এপ্রিল ২০১৯:
ছাত্রজীবনে সবারই কখনও না কখনও মনে হয়, ইশ যদি পরীক্ষার ঝামেলাই না থাকত কতই না ভাল হত! তার অন্যতম কারণ হতে পারে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন জাপানে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের কোনও পরীক্ষাই নেওয়া হয় না।
প্রযুক্তির দিক থেকে উন্নত দেশগুলির মধ্যে একটি হল জাপান। তবে শুধু প্রযুক্তি কেন শিক্ষা, বিজ্ঞান-সব দিক থেকেই উন্নতির অন্যতম শিখরে রয়েছে এই দেশ। জাপানি সংস্কৃতি এতটাই বৈচিত্রপূর্ণ যে, প্রথম থেকেই পশ্চিমী দেশগুলির কাছে চর্চার অন্যতম বিষয়। কিন্তু এদেশে শিশুদের চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত কোনও পরীক্ষা নেওয়া হয় না। জাপান সরকার মনে করে শুধুমাত্র পড়াশোনা করলে এবং ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার চাপ দিলেই যে উন্নতি করা সম্ভব এমন ধ্যানধারণা সঠিক নয়। সেইকারণেই এদেশে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্গত কোনও বিষয়ের ওপর পরীক্ষা নেওয়া হয় না। বরং তার জায়গায় শিশুদের শারীরিক, মানসিক এবং নৈতিক বিকাশ সুনিশ্চিত করাই এখানকার স্কুলগুলির প্রধান লক্ষ্য।
জাপানের স্কুলগুলিতে খুব ছোট থেকেই ছেলে-মেয়ের আচার-আচরণ এবং শিষ্টাচারের ওপর বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের লক্ষ্য থাকে যাতে খুব ছোট থেকেই যাতে শিশুদের মধ্যে মনুষ্যত্ত্বের বিকাশ ঘটে এবং তারা যাতে আদর্শবান মানুষ হয়ে উঠতে পারে সেই চেষ্টাই করেন তাঁরা। তাই ছোট থেকেই জীবন-যুদ্ধে সামিল হওয়ার চেয়ে জীবনকে কী করে আরও সুন্দর করে গড়ে তোলা যায়, ছাত্র-ছাত্রীদের সেই শিক্ষাই দেন তাঁরা। বিষয়টি খুব সহজ সরল এবং আকর্ষণীয় বলে মনে হলেও এই নিয়মকে বাস্তবে রূপায়িত করা খুব সহজ কাজ নয়।
কিন্তু কেন চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত কোনও পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই জাপানে? কারণ জানলে বিস্ময় জাগবে। স্কুলে ভর্তির পর থেকে প্রথম চার বছর প্রথম চার বছর পর্যন্ত শিশুদের তাদের দোষ-গুণের মানদণ্ডে বিচার করা হয় না। তাদের মধ্যে কে ভাল বা কে খারাপ সে বিচার না করে বরং কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ, কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল সে শিক্ষা দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা উচিত, বা কার সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় ইত্যাদি নীতিগত শিক্ষা প্রদানের ওপর জোড় দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, পাশাপশি প্রকৃতির মধ্যে পশু-পাখির সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয়,-সেই শিক্ষাও ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল থেকেই পায়। শুধু তাই নয়, শিশুরা যাতে খুব অল্প বয়স থেকে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে, তার জন্য, জামাকাপড় পড়া, নিজে হাতে খাবার খাওয়া, নিজের জিনিস নিজেই গুছিয়ে রাখার মতো ছোট ছোট কাজ হাতে ধরে শিখিয়ে দেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এইসবের মাঝে যে পড়াশোনাকে একেবারে ব্রাত্য করে দেওয়া হয়, তা কিন্তু একেবারেই নয়। রোজের পড়াশোনা রোজ করতে হয় এবং প্রয়োজনে সপ্তাহান্তে এবং ছুটির দিনেও পড়াশোনা করতে হয়। বছরের পর বছর এক ক্লাসে থেকে যাওয়া সে দেশে বিরল। স্কুলের পরেও ছাত্র-ছাত্রীরা যোগ দেয় বিভিন্ন ওয়ার্কশপে। সাধারণত বিকেলের পর এই ওয়ার্কশপগুলি করা হয়। সেখানে বিভিন্ন ধরনের গেম শো, ক্যুইজ-এর আয়োজন করা হয়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মাথায় পড়াশোনার পাহাড় চাপিয়ে না দিয়ে অন্য কৌশলে তাঁদের শিক্ষা দেওয়ার এই পদ্ধতির জন্যই জাপানের শিক্ষাব্যবস্থার কথা দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
জাপানে শিশুদের পুঁথিগত শিক্ষার থেকেও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় তাদের স্বাস্থ্যের ওপর। এইজন্য ছোট থেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সুস্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ নজর দেয় সেখানকার স্কুলগুলি। শুধু তাই নয়, সহপাঠীদের সঙ্গে একসঙ্গে ভাগ করে খাবার খাওয়ার অভ্যাসও শুরু হয় স্কুল থেকেই। অন্যান্য দেশে যেখানে পাঠ্যবই এবং পরীক্ষার বাইরে সেই অর্থে আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয় না, বা হলেও তা সর্বদাই গৌণ ভুমিকা পালন করে, সেখানে জাপানে পাঠ্যপুস্তকের বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় করে দিয়ে তার সঙ্গে সখ্যতা তৈরির ওপরেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।