আহমেদ নাসিম আনসারী,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ২৩ মার্চ -২০১৪ :কেন্দ্র দখল, সংঘর্ষ, জালভোট, ভোটকেন্দ্রে যেতে ভোটারদের বাঁধা প্রদান, হামলা-ভাংচুর, লুটপাট ও ককটেল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে রোববার ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের ৬২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে নির্বাচন অফিস ও স্থানীয় প্রশাসন ৩১ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮শ ২৮ জন।
সকাল আটটায় ভোট শুরুর আধা ঘণ্টার মাথায় রঘুনাথপুর ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী রবিউল ইসলামের সমর্থকরা বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাঁধা দেয়। এসময় বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ্যাড. এমএ মজিদের সমর্থকরা কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সাথে হাতাহাতি ও সংঘর্ষে জড়ায়। পরে র্যাব সদস্যরা এসে লাঠিপেটা করে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেয় বলে জানান সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও হরিণাকুণ্ডুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আমিন। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হাফিজুর রহমান জানান, সংঘর্ষের কারণে ভোটাররা আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি শুরু করলে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সাড়ে ৯টার দিকে আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
সকাল ১১টার দিকে কাপাসহাটিয়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া ভোট কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে যেতে ভোটারদের বাঁধা দেয়। এসময় বিএনপি সমর্থকদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৮ জন ভোটার আহত হয়েছেন। দুপুরের পর ভোটকেন্দ্রটি দখলে নেয় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। ঘোড়াগাছা ভোটকেন্দ্রে বিএনপি সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। জোড়াদাহ ইউনিয়নের ভেড়াখালী ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার পথে দুই মহিলা ও এক পুরুষ ভোটারকে মারপিট করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা। আহতদের দাবি, তারা সামাজিকভাবে বিএনপি সমর্থক বলেই এ হামলা চালানো হয়েছে। পরে বিজিবি সদস্যরা ওই কেন্দ্রের বাইরে থাকা বহিরাগতদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তাহেরহুদা ইউনিয়নের নারায়নকান্দি গ্রামে ভোট দিতে যাওয়ার পথে এক ভোটারের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আহতদেরকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল সহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
দুপুরে পোড়াহাটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে পর পর ৩টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে ভীতি সৃষ্টির জন্য এ ঘটনা ঘটানো হয় বলে স্থানীয়রা জানান। তবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সে ব্যাপারে পুলিশ কিছুই জানাতে পারেনি। ভায়না ইউনিয়নের রহিমপুর ও ভায়না ভোটকেন্দ্রে বিএনপি সমর্থকদের যেতে বাঁধা ও হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। এ দুটি কেন্দ্র দখল করে জালভোট প্রদান করা হয়। দুপুরের পর তাহেরহুদা ইউনিয়নের ভবানীপুর ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রবিউল ইসলাম কেন্দ্র দখলে নেন। সেখানে আধাঘন্টা ধরে ব্যালটে সিল মারে ১০/১২ জন যুবক।
এদিকে ভোটের শেষ মুহুর্তে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে চরপাড়া কেন্দ্রের পাশে অবস্থিত বাজারে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ২৫টি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। এর আগে সকাল থেকে এই কেন্দ্রে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকদের আসতে বাঁধা সৃষ্টি করে আওয়ামীলীগ কর্মীরা। বিকালে তারা বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাব-বিজিবি সদস্যরা সেখানে অবস্থান নেয়।
শৈলকুপা উপজেলার মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ হোসেন জানান, এলাকায় আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা অস্বীকার করেছেন তিনি। এদিকে বিএনপি সমর্থক চেয়ারম্যান প্রার্থী এ্যাড. এমএ মজিদ দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ কর্মীরা বিএনপি সমর্থকদের অর্ধশতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও ভাঙচুর করেছে। হরিণাকুণ্ডুু থানার ওসি মহিবুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ ঘটনার পরপরই সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।