কুমিল্লায় বীরচন্দ্র পাঠাগারে আগুন, ২০০ বছরের পুরনো বই-পুঁথি লুট

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর কুমিল্লাজুড়ে উচ্ছ্বাস-উল্লাসের মাঝে সংঘাত ও সহিংসতা দেখা দেয়। এরই ফাঁকে লুট হয়ে গেছে কুমিল্লা বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তন (টাউন হল) ও পাঠাগারের অমূল্য সব বই। একই সময়ে পাঠাগারের কিছু বই এবং বইয়ের তাকও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কুমিল্লার সচেতন নাগরিক সমাজ। তাদের দাবি, অবিলম্বে লুট হওয়া বইগুলো উদ্ধারে প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায়ও একই দাবি জানান সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।

দেশের অন্যতম প্রাচীন এই পাঠাগারে দেড় থেকে ২০০ বছরের পুরোনো গ্রন্থ ও পাণ্ডুলিপিসহ অন্তত ১৮ হাজার বই সংরক্ষিত ছিল বলে জানা গেছে। এর মধ্যে দুর্বৃত্তদের তাণ্ডবে সহস্রাধিক বই লুট এবং আগুনে অসংখ্য বই পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে পাঠাগার কর্তৃপক্ষ।

এর আগে গত ৫ আগস্ট সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবরে কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে বিজয়োল্লাস চলাকালে একদল দুর্বৃত্ত বীরচন্দ্র পাঠাগারে প্রবেশ করে। প্রথমে তারা কেয়ারটেকারের কক্ষে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় সেই কক্ষে থাকা কিছু বই পুড়ে যায়। এরপর দুর্বৃত্তরা দ্বিতীয় তলায় প্রবেশ করে। সেখানে পুরো গ্রন্থাগার ভাঙচুর করে। লুট করে নিয়ে যায় বইগুলো। এসব বইয়ের অনেকগুলো অন্তত ২০০ বছর আগে মুদ্রণ করা হয়েছিল।

আরো পড়ুন: হিন্দু নিপীড়ন বন্ধে জাতিসংঘের সামনে প্রবাসীদের বিক্ষোভ

বীরচন্দ্র গ্রন্থাগারের কেয়ারটেকার রঞ্জিত জানান, সোমবার দুপুরে তিনি খাবার খাওয়ার জন্য বাইরে যান। তারপর শোনেন গ্রন্থাগারে হামলা হয়েছে। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার কক্ষ।

সরেজমিনে বীরচন্দ্র গণপাঠাগারে দেখা যায়, কেয়ারটেকার রঞ্জিতের কক্ষ এবং দোতলায় পাঠাগারের সবগুলো আলমারি ভেঙে পড়ে আছে। সেখানে কোনো বই নেই। অনেক ম্যাগাজিন পত্রিকা ও বেশ কিছু বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মেঝেতে কাচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

এ বিষয়ে লেখক ও গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, ‘দেশের ঐতিহ্যবাহী ও পুরোনো কুমিল্লার এই পাঠাগারে ১০০ বছর আগের বই ছিল পাঁচ হাজারের বেশি, এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকার প্রথম সংখ্যা থেকে প্রায় সবগুলো সংখ্যাই ছিল। এখানে মহাকবি ফেরদৌসি রচিত শাহনামার প্রথম সংস্করণের কপি ছিল, মূল রাজমালার প্রথম সংস্করণের কপি ছিল। অনেকগুলো পুঁথি ছিল। এ রকম অসংখ্য দুর্লভ গ্রন্থ ছিল।’

এগুলো শুধু কুমিল্লার নয়, পুরো বাংলাদেশেরই অমূল্য সম্পদ উল্লেখ করে বইগুলো যারা লুট করেছেন তারা যেন দয়া করে সেগুলো ফিরিয়ে দেন, সেই আবেদন জানান তিনি।

৮০ দশকের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কুমিল্লার ছাত্র-যুব সংগঠক শাহ মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘বইগুলো আমাদের কুমিল্লার সম্পদ। এগুলো যারা নিয়েছেন তারা যেন স্বউদ্যোগে লাইব্রেরিতে সেগুলো ফিরিয়ে দেন।’

বীরচন্দ্র পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক মো. শরিফুল ইসলাম জানান, এই গ্রন্থাগারে অন্তত ১৮ হাজার বই ছিল। সেদিন অনেকে মহামূল্যবান বইগুলো লুট করে নিয়ে যায়। বইগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি গ্রন্থাগারটি পুনর্গঠন করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।