কুবিতে ফের চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্র
কুবি প্রতিনিধি,২০ এপ্রিল ২০২৩: ২০২০ সালের পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) আবারও এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষক সাদিয়া জাহান ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তার বিরুদ্ধে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ‘পিএইচএআরএম-২২০২: ফার্মাসিউটিক্যাল অরগানিক কেমিস্ট্রি-২’ শিরোনামের কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।
গত বছরের ৬ নভেম্বর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সেমিস্টারের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাথে ‘পিএইচএআরএম-২২০২: ফার্মাসিউটিক্যাল অরগানিক কেমিস্ট্রি-২’ কোর্সটির মানোন্নয়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের এ কোর্সটি না থাকায় শুধুমাত্র মানোন্নয়ন দেওয়া ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রগুলো পরীক্ষার পর সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষক সাদিয়া জাহানকে বুঝিয়ে দেন পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা। তবে ওই পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করতে গিয়ে উত্তরপত্র না পেয়ে সাদিয়া জাহানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরপত্র খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি জানান পরীক্ষা কমিটির সভাপতি জয় চন্দ্র রাজবংশীকে।
আরো পড়ুন: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদের নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫,৫৮৪
পরবর্তীতে পরীক্ষা কমিটির সভাপতির মাধ্যমেই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার বিষয়টি উল্লেখ করে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান সাদিয়া জাহান। যদিও পরীক্ষা কমিটির বাকি দুই সদস্য বিদ্যুৎ কুমার সরকার ও মো. কামরুল হাসান এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন।
উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার বিষয়টি স্বীকার করে সাদিয়া জাহান বলেন, উত্তরপত্রগুলো আমার কক্ষেই ছিল। মূল্যায়ন করতে গিয়ে সেগুলো খুঁজে না পেয়ে আামি পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে জানাই। এরপর তাঁর থেকে অগ্রায়ন নিয়েই আমি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।
এদিকে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সাদিয়া জাহান থেকে চিঠি পেয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুুল মঈনকে জানালে তিনি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. রায়হান উদ্দিনকে আহ্বায়ক, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ আইনুল হককে সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে মার্চ মাসের শেষের দিকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. রায়হান উদ্দিন বলেন, আমাদেরকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আমরা শিগগির সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেব।
এদিকে, তদন্ত চলাকালীনই বিদেশ যাওয়ার জন্য অনাপত্তিপত্র পেয়েছেন সাদিয়া জাহান। আবেদনের পর গত বৃহস্পতিবার শেষ কার্যদিবসে তড়িঘড়ি এ চিঠি দেয়া হয় থাকে। একাধিক শিক্ষকের দাবি উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের গ্রুপের সদস্য হওয়ায় একটি বিষয় তদন্তাধীন থাকার পরও বিনা ভোগান্তিতে তিনি অনাপত্তিপত্র পেয়ে গেছেন।
এসব বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও খুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো আমার জানার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। তাই আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না।’
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২০ সালের ১ মার্চ অনুষ্ঠিত গণিত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ‘এমটিএইচ-২২১: রিয়াল এনালাইসিস-২’ শিরোনামের কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার সবকটি উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে ওই বিভাগের শিক্ষক মো. আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। সেসময় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় ৮০ তম সিন্ডিকেট। তবে পরবর্তীতে তাঁকে সতর্ক করেই অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়া হয়।