কলাপাড়ায় শিশু শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন

মো.মোয়াজ্জেম হোসেন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সহকারী শিক্ষক খলিলুর রহমানের যোগদানকে কেন্দ্র করে খাজুরা আশ্রায়ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন ও প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করছে। অভিবাভকরা সন্তানদের স্কুলে না পাঠানোর ঘোষনা দিয়েছেন। শনিবার থেকে ক্লাশ বর্জনসহ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন তারা।
শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জানান, শিক্ষক খলিলুর রহমান খাজুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। হঠাৎ করে ২০০৬ সালে কাউকে কোন কিছু না বলে অন্যত্র চলে যাওযায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ে। শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধের উপক্রম হয়। অনেকে এখন শ্রমিক ও দিন মজুরের কাজ করছে। সন্তানরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকে।
স্থানীয়রা আরো জানান, খলিলুর রহমানের বাড়ি স্কুলের খুবই কাছে হওয়ায় সে ঠিকমত পাঠদান না করে বরং নিজ কাজে ব্যস্ত থাকবে। ফলে তার এই স্কুলে থাকা না থাকা সমান। একাধিক অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে জানান, খলিল মাস্টার ও তার স্ত্রী শিরিন সুলতানা দুজনই শিক্ষক। তারা যদি বাড়ির কাছের স্কুলে থাকলে পারিবারিক কাজে দু’জন ব্যস্ত থাকবে। মানুষের অভিযোগ আগে ছিল টিনের ঘর আর এখন সরকার পাকা ভবন করে দেয়ায় এখানে আসার ইচ্ছা হয়েছে ওই শিক্ষক দম্পত্তির। সে তার ব্যক্তিগত কাজ হাসিলের উদ্দেশ্যেই এখানে তদবির করে বদলী হয়ে আসছেন ।
অভিভাবক কবির মাঝি, আ. ছালাম ফিটার বলেন, খাজুরা আশ্রয়ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শুরু থেকেই ছেলে মেয়েদের শিক্ষার স্বার্থে আমরা অভিভাবকরা যে যেভাবে পারছি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষকদের বেতন ভাতার ব্যবস্থা করছি। সে হঠাৎ চলে যাওযায় আমাদের অনেক সন্তানরা এখন শ্রমিক ও দিন মজুরের কাজ সকরছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। আমরা তাকে মানিনা। সে এই স্কুলে যোগদান করতে পারবে না। তার কারনে আমাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমান প্রধান শিক্ষক স্কুলের হাল ধরার কারনে স্কুলের পরিবেশ সুন্দর রয়েছে।
বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র রফিকুলের ভাষ্য, বর্তমানে যে স্যার ও আপা আছে তাদের চাই। আর খলিল স্যার ও তার স্ত্রী আপাকে চাই না। পঞ্চম শ্রেণীর মিম জানায়, আমাদের যেই স্যার ও আপা লেখাপড়া শিখিয়েছে আমরা তাদের চাই। খলিল স্যার থাকলে আমরা স্কুলে যাবনা। তার কারনে আমাদের এলাকার অনেকের রেখাপড়া হয় নাই।
সহকারী শিক্ষক খলিলুর রহমান জানান, ২০০২ সাল থেকে আমি ওই স্কুলের হাল ধরি। আমার চাকরী হলে ২০০৬ সালে অন্যত্র যোগদান করি। এখন আমাকে কর্তৃপক্ষ খাজুরা আশ্রায়ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের আদেশ দিয়েছেন। খাজুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সুলতান আহমেদ বলেন, সহকারী শিক্ষক খলিলুর রহমান স্কুলে যোগদান করতে আসলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের বিরোধীতায় যোগদানপত্র গ্রহণ করতে পারি নাই। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
লতাচাপলী ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, আমি বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে একটি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা কোন মতেই শিক্ষক খলিলকে এখানে চায় না। তাদের এই জোড়ালো প্রতিবাদকে ছোট করে দেখার সুযোগ নাই। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিলাল সিকদার জানান, বিষয়টি শিক্ষা কমিটিকে অবহিত করেছি। সকলের সমন্বয়ে সমাধান করা হবে।
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।