ডেস্ক,৪ এপ্রিল: আগামী অর্থবছরে ৩৩ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে। এ বাবদ সরকারের খরচ হবে ৪ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ হিসাব এরই মধ্যে চূড়ান্ত করে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ চেয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে অর্থসচিবকে একটি আধা সরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছে শিক্ষা সচিব (সিনিয়র)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এমপিওভুক্ত করতে যাচাই-বাছাই চলছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো যোগ্য বলে বিবেচিত হবে সেগুলোকে পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্ত করা হবে।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এটা এমনও হতে পারে যে ১০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আগামী অর্থবছরে ৩৩ শতাংশ করে এমপিও দিলাম। আবার এমনটাও হতে পারে যে প্রথম বছরে ১০০টির মধ্যে ৩৩টিকে এমপিও দিলাম, পরবর্তী ২ বছরে অন্যগুলোকে দিলাম। এ দুটির যে কোনো একটি হতে পারে। এ নিয়ে বাজেটে ঘোষণা আসবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন শিক্ষা বার্তাকে বলেন, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন সেটা পারসেন্টেজের হিসাবে না প্রতিষ্ঠান হিসাবে হবে সেটা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
তবে বরাদ্দের সঙ্গে এমপিওভুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে তিনি বলেন, সরকার যখন এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নেবে, তখন বরাদ্দের প্রশ্ন আসবে।
আগামী ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও বাজেটে শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
আগামী বাজেটে অর্থ বরাদ্দের জন্য পাঠানো ডিও লেটারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী যে সব উপজেলায় একটি করে কলেজ করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি স্কুলকে সরকারিকরণের ঘোষণা দেয়া হয়।
এসব স্কুল ও কলেজকে পর্যায়ক্রমে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। এছাড়া নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে। এসব খাতে অতিরিক্ত ও এককালীন বরাদ্দের প্রয়োজন।
সূত্র মতে, আগামী বাজেটে কোন খাতে কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন এর একটি প্রাক্কলন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ। এ হিসাবটি পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সেখানে বলা হয়, নতুনভাবে ৩৩২টি বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের জন্য এর ব্যয় মেটাতে আগামী অর্থবছরে টাকার প্রয়োজন হবে ২৪২ কোটি ৫১ লাখ ১১ হাজার।
এছাড়া ২৯৯টি কলেজকে সরকারিকরণের কারণে এর পেছনে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৬২৬ কোটি ৯৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। হিসাবে আরও দেখানো হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিসিআরসিএ) এমপিওভুক্ত পদে ১৯ হাজার ৯৪ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছে। তাদের বেতন-ভাতার জন্য প্রয়োজন হবে ৪৮৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
এছাড়া ২ হাজার ৮৭১ জন প্রভাষককে নিয়োগেরও সুপারিশ করেছে এনটিসিআরসিএ। তাদের নিয়োগ দেয়ার পর বেতন-ভাতা খাতে অর্থের প্রয়োজন হবে ৯৯ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
সূত্র আরো জানায়, ৬ হাজার ১৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির প্রস্তাব করা হবে। এর অনুমোদন হলে পরিচালনা ব্যয় খাতে অর্থের প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি) পর্যন্ত এমপিওভুক্তির জন্য বার্ষিক প্রয়োজন হবে ৩৪ লাখ ৮২ হাজার ৩০০ টাকা। একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (নবম-দশম) পর্যন্ত এমপিওভুক্তির জন্য প্রয়োজন হবে ৪৫ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ টাকা।
এভাবে একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (একাদশ থেকে দ্বাদশ) জন্য ব্যয় হবে ৬৩ লাখ ৫২ হাজার ১০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জন্য ব্যয় হবে ৯১ লাখ ৭০ হাজার ৮০০ টাকা। ডিগ্রি কলেজের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা। ৬ হাজার ১৪১টি প্রতিষ্ঠানকে এমপিও করার খাতে এসব অর্থ ব্যয় করা হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এর প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতায় মাসে খরচ হয় ১ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। স্বীকৃতির বাইরেও কয়েক হাজার নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে।
সর্বশেষ ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এরপরই এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছেন।