ডেস্ক রিপোর্ট : ৩৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ৮৯৮ জনকে গত বছরের আগস্টে ননক্যাডার হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। প্রায় এক বছর হয়ে গেল, কিন্তু তাঁরা এখনো নিয়োগ পাননি।
নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের অভিযোগ, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীন নন–ক্যাডার পদের মতো তাঁদেরও দশম গ্রেডে নিয়োগ পাওয়ার কথা থাকলেও তাঁদের দুই ধাপ নিচে ১২তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এই গ্রেডজটিলতার কারণে নিয়োগ দিতে দেরি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পিএসসি সূত্র জানায়, ৮৯৮ জনকে গত বছরের ১০ আগস্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। কিন্তু তাঁরা এখনো নিয়োগ পাননি।
৩৪তম বিসিএসে ননক্যাডার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করা জাহিদ হাসান। সে নিয়োগ এখনো হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি, কাজ হয়নি। এর মধ্যে ৩৫তম বিসিএসের কার্যক্রমও শেষ হয়ে গেছে, তবুও আমাদের নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হয়নি।’
নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শ্যামল সরকার বলেন, ‘কবে চাকরিতে যোগদান করতে পারব জানি না। শুনছি, আমাদের ১২তম গ্রেডে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।’ তিনি জানান, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ননক্যাডার পদের মতো তাঁদেরও দশম গ্রেডে নিয়োগ পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাঁদের দুই ধাপ নিচে ১২তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এটি সবচেয়ে বেশি হতাশার।
সুপারিশপ্রাপ্ত কয়েকজন প্রার্থী বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদটি ২০১৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু তখন মন্ত্রণালয় কৌশলে প্রধান শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণ করে ১১তম (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) ও ১২তম গ্রেডে (প্রশিক্ষণবিহীন)। এখন বিসিএসে উত্তীর্ণদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম বাস্তবায়ন করতে চাইছে। অথচ ননক্যাডার পদে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন পদে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন বা পেতে যাচ্ছেন, তাঁরা সবাই দশম গ্রেডে যোগ দিয়েছেন বা দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘আমরা নিয়োগের সুপারিশ করেছি। এখন বাকি কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের।’
প্রধান শিক্ষকের নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্রেড-সংক্রান্ত সমস্যার কারণে নিয়োগপ্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, কাজটির দায়িত্বে আছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বিদ্যালয়-২) মনোয়ার ইশরাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সব প্রতিবেদন পাইনি। প্রতিবেদন পেলে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’
বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলেও কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে একজন উপসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাজ চলছে, দ্রুততম সময়ে এটি শেষ করা হবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘প্রার্থীদের পুলিশ ও মেডিকেল প্রতিবেদন প্রস্তুতের কাজ চলছে। এটি শেষ করে আগামী দুই মাসের মধ্যেই নিয়োগটি চূড়ান্ত করা যাবে বলে আশা করছি।’
সূত্র : প্রথম আলো