সুব্রত রায় : ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তির সুযোগ বাড়ানো হচ্ছে। একইসঙ্গে, যারা কলেজে ভর্তির আবেদনই করেননি তাদের জন্যও নতুন করে আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ১৬ জুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আসনের বিপরীতে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকা ধরে ২২ জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ভর্তির জন্য পাঁচ দিন সময় দেওয়া হলেও রাজধানীর নামিদামি কলেজগুলোতে এখনো অর্ধেক শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়নি বলে জানা গেছে। তাই অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটি।
সংখ্যায় বেশি শিক্ষার্থী মেধাতালিকা থেকেই ভর্তি হয়। যেহেতু মেধাতালিকা থেকে এবার বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি, তাই অপেক্ষেমান তালিকা থেকে বেশি শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে।
অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে আগামীকাল শুক্রবার। নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি ২৫ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। বিলম্ব ফিসহ ভর্তি ১০ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত।
সাবকমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভর্তির ঘোষিত এই সময়সূচি আরো বাড়ানো হবে। তবে সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু অনেক আসন খালি থাকবে। তাই কেউ যাতে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয় সে ব্যাপারটি লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। যারা এখনো অনলাইন বা এসএমএসে আবেদনই করেনি তাদের কীভাবে ভর্তির সুযোগ দেওয়া যায় সে চিন্তা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে নির্বাচিতদের ভর্তি শেষে আসন খালি থাকা সাপেক্ষে ভর্তি উন্মুক্ত করা যায় কি না, সে বিষয়টিও ভাবনায় রয়েছে।
কলেজে ভর্তির নতুন আবেদনের সময় কবে থেকে শুরু বা শেষ হবে, তা এখনো ঠিক করা হয়নি। তবে যারা চলতি বছর একেবারেই আবেদন করেননি তাদের জন্য নতুন করে আবেদন করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন বলেন, এবার একেকজন শিক্ষার্থী ২০টি কলেজ পছন্দের সুযোগ পেয়েছে। তাই দেখা গেছে, সেরা মেধাবীরা অনেকেই সাত থেকে ১০টি পর্যন্ত কলেজে মনোনীত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তারা তো ভর্তি হয়েছে একটি কলেজে। ফলে বাকি কলেজগুলোর ওই আসন খালি হয়ে গেছে। এ কারণে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শুক্রবার যে মেধাতালিকা প্রকাশ হবে তাতে অনেক শিক্ষার্থীই ভর্তির সুযোগ পাবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, নামিদামি কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী কম ভর্তি হওয়ার পেছনে কারণ একটাই, বেশির ভাগ মেধাবী শিক্ষার্থী আবেদন করেছে ২০ থেকে ৩০টি নামিদামি কলেজে। ফলে প্রায় সব কলেজেই তারা মেধাতালিকায় রয়েছে। কিন্তু তারা ভর্তি হয়েছে একটি কলেজে। ফলে বাকি কলেজগুলো শিক্ষার্থী পাচ্ছে না।
তবে এসব নামিদামি কলেজে যারা অপেক্ষমাণ তালিকার শুরুর দিকে রয়েছে তারাও মেধাবী। হয়তো সামান্য নম্বরের ব্যবধানে তারা প্রথম মেধাতালিকায় আসতে পারেনি। অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে যে মেধাতালিকা করা হবে তাতে তারাই এবার ভর্তির সুযোগ পাবে।
এ ছাড়া রাজধানীর নটরডেম কলেজ, সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও হলিক্রস কলেজ এবারো ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। এসব কলেজের আসন সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার ১০০। এসব কলেজে যারা ভর্তি হয়েছে তারা যথেষ্ট মেধাবী। তারাও অনলাইনে আবেদন করেছিল। আবেদনের বেশির ভাগ কলেজেই তারা সুযোগ পেলেও ভর্তি হয়নি বলে জানা গেছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা কলেজের বাংলা মাধ্যমের বিজ্ঞানে আসন ৬০০। এর মধ্যে ৯০ জন ভর্তি হয়েছে। আর ইংরেজি ভার্সনে ১০০ আসনের বিপরীতে এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে মাত্র তিনজন।
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনে ১০০ আসনের মধ্যে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৬৫ জন। বাংলা মাধ্যমে ভর্তি হয়েছে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা ভার্সনের মোট আসনে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। ইংরেজি ভার্সনে ১২০টি আসনের মধ্যে ভর্তি হয়েছে ২৭ জন। বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর নামিদামি প্রায় সব কলেজের চিত্র প্রায় একই।
জানা যায়, সারা দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার কলেজের আসন সংখ্যা প্রায় ১৯ লাখ। আর এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন। চলতি বছরে উত্তীর্ণদের সঙ্গে ২০১৪ ও ২০১৫ সালের পাস করা শিক্ষার্থীদেরও আবেদনের সুযোগ রয়েছে। তবে আবেদন করেছে ১৩ লাখ এক হাজার ৯৯ জন। আবেদনকারীদের মধ্যে ৯ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজে ভর্তির জন্য মেধাক্রমে স্থান পেয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে ১০ জুলাই।