একাদশে ভর্তিতে অপেক্ষমাণ তালিকা অনিয়মের পাহাড়

21059_x2ডেস্ক: অপেক্ষমাণ তালিকা থাকার পরও মিরপুরের বিসিআইসি কলেজে ভর্তি হতে পারেনি ফয়সাল আহমেদ। তার বাবা মাহফুজ আহমদের অভিযোগ, ২৪শে জুন প্রথম মেধা তালিকা থেকে ভর্তি করার কথা থাকলেও ২৩শে জুন সিরিয়াল না মেনে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আমার ছেলে ৪.৯০ পেয়ে ভর্তি হতে পারেনি। অথচ ৪.৩৩ পেয়ে এখানে ভর্তি হয়েছে। এই বিষয়টি বোর্ড কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাতে বোর্ডে এসেছি। সেখানে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তার। তার অভিযোগ, অপেক্ষমাণ তালিকায় সিরিয়াল মানেনি কলেজ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২৪, ২৫ ও ২৬ এই তিনদিন কলেজের সামনে অভিভাবকরা বিক্ষোভ করলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো সাড়া দেয়নি। তার অভিযোগ, মেধা তালিকায় সুযোগ পাওয়া ভর্তিচ্ছুরা কিছুটা স্বচ্ছভাবে ভর্তি হতে পেরেছেন। কিন্তু অপেক্ষমাণ তালিকার ভর্তিতে যা ইচ্ছে তা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৪শে জুন প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকা ভর্তিতে সারা দেশে বেশকিছু কলেজে ভর্তি অনিয়ম ও বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন কলেজের গেইট আটকে রেখে তাদের পছন্দের ছাত্র ভর্তি করিয়েছেন। এছাড়া, রাজধানীর আশেপাশে প্রায় অর্ধশত কলেজে ভর্তি অনিয়ম ও বাণিজ্য করেছে বলে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। ভর্তির সুযোগ পেয়েও ভর্তি হতে পারেনি এরকম শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা এসব কলেজের বিরুদ্ধে বোর্ডে অভিযোগ করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা ভর্তি বাণিজ্য করেছেন। এর ফলে যোগ্যতা থাকলেও ভর্তি হতে পারেনি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কর্তৃপক্ষ প্রথম মেধা তালিকায় নাম না থাকলেও সেসব শিক্ষার্থীদের ভর্তি করছেন। এদিকে বঞ্চিত হচ্ছেন মেধা তালিকার অনেক শিক্ষার্থী।

এদিকে সারা দেশে একাদশ ভর্তিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গত ২৭শে জুন খুলনার সুন্দরবন কলেজে অনিয়ম কার্যক্রমে বাধা দিতে গেলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সরকারি বিএল কলেজ শাখার সভাপতি সঞ্জিত মণ্ডলের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে। সঞ্জিত মণ্ডলের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও তাদের বিচারের আওতায় আনাসহ সারা দেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
এব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন বলেন, মেধা তালিকা পর্যন্ত প্রায় শতভাগ স্বচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম মেধা তালিকায় বেশকিছু কলেজে ভর্তির অনিয়ম আমরা পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্ত কলেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বোর্ডে জমা পড়া অভিযোগে দেখা যায়, রাজধানীর দক্ষিণখানের হজক্যাম্প এলাকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলেজে প্রথম মেধা একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভর্তিচ্ছু সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি মেধা তালিকায় ১২৬তম হয়েও ভর্তি হতে পারিনি। কিন্তু মেধা তালিকায় ২৫৬ এবং ২৮৮তম হয়ে অন্য দুই শিক্ষার্থী আমার চোখের সামনে অনায়াসে ভর্তি হয়ে গেল। আরেক শিক্ষার্থী আছিয়া খাতুন জানান, আমি ১২৯তম হওয়ার পরেও আমাকে ভর্তি নেয়া হয়নি কিন্তু মেধা তালিকায় ৪২৪তম হলেও আরেক শিক্ষার্থীকে কেবল টাকার জোরে ভর্তি নেয়া হয়েছে। আবার অভিযোগ পাওয়া গেছে, ১১২তম হয়েও আরেক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেনি। মেধা তালিকা অনুসারে ভর্তির কোনো নীতিমালাই কলেজ কর্তৃপক্ষ অনুসরণ করেনি। মেধা তালিকা ছাড়াই যেসব শিক্ষার্থী আগে ভর্তি হয়ে গেছে তাদেরকেই ভর্তি নিয়ে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. মো. আরিফুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, সারা দেশে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তিতে অনিয়মের নানা অভিযোগ আসছে। কিন্তু এসব অভিযোগের ব্যাপারে সরাসরি ব্যবস্থা নেয়া যায় না। যেসব কলেজ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের নীতিমালার বাইরে গিয়ে ভর্তি করিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছি।

দ্বিতীয় অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ: একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে অপেক্ষমাণদের মধ্য থেকে দ্বিতীয় মেধাক্রমের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার এই তালিকা প্রকাশ করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি। শিক্ষার্থীরা ভর্তি আবেদনের ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পাসের সাল ও বোর্ডের নাম লিখে তাদের ফল দেখতে পারবেন। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোর নোটিশ বোর্ডেও ফল টানিয়ে দেয়া হবে। এদিকে এখন পর্যন্ত পৌনে ৩ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির বাইরে রয়েছেন। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি সূত্র জানায়, শূন্য আসনের ছয়গুণ শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় মেধাক্রমে আনা হয়েছে। গতকাল ও আজ দ্বিতীয় মেধাক্রমে থাকা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। তবে আবেদনকারীদের মধ্যে এখনও ভর্তির বাইরে রয়েছেন দুই লাখ ৮১ হাজার শিক্ষার্থী। বিলম্ব ফিসহ কলেজে ভর্তি হওয়া যাবে আগামী ১০ থেকে ২০শে জুলাই পর্যন্ত। একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে ১০ই জুলাই।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভর্তি হবে না তাদের জন্যই মূলত বিলম্ব ফি দিয়ে ভর্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু ৩০শে জুনের পর আরেকটা তালিকা প্রকাশ নাকি ভর্তি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।