ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ও গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পর এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভর্তি পরীক্ষায় সেরা ২০-এ জায়গা করে নিয়েছেন গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীস্থ তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার ৫ শিক্ষার্থী।
তাদের ভর্তি পরীক্ষা ও অ্যাডমিশন জার্নি কেমন ছিল, বর্তমানে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগে পড়াশোনা করতে আগ্রহী। এই ৫ শিক্ষার্থীরা হলেন- আমিনা বুশরা, আশরাফুল ইসলাম, ইয়াসিন আরাফাত, সায়েদুজ্জামান আলভী ও রাফিউল মাসউদ। এ নিয়ে প্রত্যেকেই আলাদাভাবে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন-
আমিনা বুশরা, ১ম স্থান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটে ১ম, ‘সি’ ইউনিটে ৬৮তম এবং ‘ই’ ইউনিটে ২য় স্থান অর্জন করেছেন শিক্ষক কন্যা আমিনা বুশরা। ঢাকার ধামরাই উপজেলার বাসিন্দা তিনি। বাবা স্থানীয় একটি আলিয়া মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক। বাবা মায়ের আদরের বড় কন্যা তিনি। প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি বেশি উল্লেখ করে বুশরা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে তিনি যতটুকু চেয়েছেন তারচেয়েও বেশি পেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, আমি অত্যন্ত খুশি। এই ফলাফল আসলেই অনেক আনন্দের। আমি চেষ্টা করেছি, আল্লাহ সফলতা দিয়েছেন। এই অনুভুতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। নিজের সম্মান, মাদ্রাসা ও পরিবারের জন্য কিছু করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। আমার শিক্ষকগণ ও আমার পরিবারের সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।
আশরাফুল ইসলাম, ৫ম স্থান
জাবির ‘বি’ ইউনিটে ৫ম স্থান অর্জন করেছেন আশরাফুল ইসলাম। আশরাফুলের বাড়ি খুলনা জেলার কয়রা উপজেলায়। পরিবারে বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান আশরাফ। আশরাফ জানিয়েছেন, বাবা-মা অনেক কষ্ট করেছেন আমার জন্য। আমিও চেষ্টার কোনো ত্রুটি করিনি। এজন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি।
ভালো ফলাফলের বিষয়ে তিনি জানান, আমি কখনো ঘড়ি ধরে পড়িনি। সময় নষ্ট না করে নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করতাম। নিয়মিত পড়াশোনা, অধ্যবসায়, সর্বোচ্চ চেষ্টা এবং আল্লাহর রহমত তার এ সাফল্য এনেছে বলে মনে করেন আশরাফ।
ইয়াসিন আরাফাত, ৬ষ্ঠ স্থান
মেধাক্রমে জাবির ‘বি’ ইউনিটে ৬ষ্ঠ স্থান অর্জন করেছেন ভোলার বাসিন্দা ইয়াসিন আরাফাত। বাবা পেশায় একজন ব্যবসায়ী এবং মা হলেন গৃহিণী। ভাইবোনদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সন্তান তিনি। সর্বকনিষ্ঠ সন্তান হওয়ায় বাবা মায়ের অনেক আদরের তিনি। ইয়াসিন জানিয়েছেন, জাবির ভর্তি পরীক্ষায় ষষ্ঠ স্থান অর্জন করায় আমি খুবই আনন্দিত ও উল্লসিত। এজন্য আনন্দচিত্তে আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন? –এমন প্রশ্নে ইয়াসিন বলেন, আমি ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করি মূলত আলিম ২য় বর্ষের শুরুতে। ইংরেজি ভোকাবুলারি ও রিডিং স্কিল, সাধারণ জ্ঞানের ব্যাসিক কনসেপ্ট এবং বাংলার মুখস্থ অংশ ও নাটক-উপন্যাস ছিল তখনকার প্রধান টার্গেট । এডমিশন টাইমে নির্দিষ্ট একটি ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে ক্লাস, শিট ও সহায়ক বইয়ের সমন্বয়ে এগুলো পুনরায় পড়েছি । সর্বোপরি কোচিংয়ের প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ ও পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে নিজেকে সফলতার দুয়ারে আনতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ।
সায়েদুজ্জামান আলভী, ১৫তম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটে ১৫তম স্থান অর্জন করেছেন মানিকগঞ্জ সদরের বাসিন্দা সায়েদুজ্জামান নুর আলভী। বাবা মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান মানিকগঞ্জের দোয়াত আলী আলিম মাদরাসার শিক্ষক ও মা গৃহিণী। পরিবারে পিতামাতার ৪ সন্তানের মধ্যে সবার বড় আলভী। বড় ছেলের এমন সাফল্যে বাবা মা দুজনেই অনেক খুশি।
আলভি তার অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, দেশের অন্যতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগরে চান্স পাওয়া আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য রহমত ও সৌভাগ্যের বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে মাদরাসার অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলীর যথাযথ পাঠদান ও অনুপ্রেরণা এবং তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। আলিম বা উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির একদম শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কেন্দ্রীক যথাযথ পড়াশোনার কারণে আল্লাহর রহমতে আমি ভালো রেজাল্ট অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
রাফিউল মাসউদ, ১৬তম
শিক্ষার্থী রাফিউল মাসউদ। এবার জাবির ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৬ তম স্থান অর্জন করেছেন তিনি। তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা যাত্রাবাড়ী শাখার শিক্ষার্থী মাসউদের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চাঁনভবানী গ্রামে। বাবা আব্দুর রব ও মা ডালিয়া বেগমের ২ সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান তিনি। ঢাবি, জাবি দুটোতেই ভর্তির সুযোগ পেয়েছে মাসউদ।
কি নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছে?– এমন প্রশ্নের উত্তরে মাসউদ বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাই। অর্থনীতি নিয়ে বিদেশে উচ্চ-শিক্ষা অর্জনের সুযোগ হলে আমি একজন অর্থনীতিবিদ হবো।
ভর্তি প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আলিম ১ম বর্ষ থেকেই এডমিশনের টুকটাক প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম এবং আলিম ২য় বর্ষের অন্যান্য পড়াশোনার পাশাপাশি এডমিশন প্রস্তুতি নিয়েছিলাম পুরোদমে। শিক্ষকদের এবং বড় ভাইদের সহযোগিতা ছিল আমার জন্য সবচেয়ে বেশি সহায়ক। আমি পাঠ্যপুস্তকগুলোতে বেশি গুরুত্ব দিতাম।