মাহাবুব আলম মানিক ও শাকুরা মুহসিনা সুপ্রীম দম্পতি বিয়ে করেছেন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া অবস্থায়। এবার ২০২৩-২৪ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় তারা একসঙ্গে পেয়েছেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এই দম্পতির সাফল্যের গল্প।
দুইজনের গ্রামের বাড়ি রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলায়। তাদের স্কুল ভিন্ন হলেও উচ্চ মাধ্যমিক একসাথে রাজশাহী কলেজ থেকে পাশ করেন মানবিক বিভাগ থেকে। মাহাবুব আলম মানিকের স্কুল ছিল কালীগ্রাম দোডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় ও শাকুরা মুহসিনা সুপ্রীমের স্কুল ছিল রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। আগ থেকে পূর্ব পরিচিত এই জুটি বিয়ে করেন উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষে পড়া অবস্থায়।
মানিক ২০২৩-২৪ সেশনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৭২তম আর শাকুরা একই ইউনিটে ১৮২তম স্থান অধিকার করেছেন। এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটে মানিক ৭১৫তম ও সাকুরা ৪৬৫তম; ‘বি’ ইউনিটে মানিক ১৫৯তম ও সাকুরা ২৮৫তম; ‘ই’ ইউনিটে মানিক ৯ম ও সাকুরা ৬২তম হয়ে ভর্তির সুযোগ পান। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন এই দম্পত্তি।
কোন বিশ্ববিদ্যালয় লক্ষ্য ছিল জানতে চাইলে সাকুরা জানান, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট তাদের আশানুরূপ হয়নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল এখনও প্রকাশ করেনি।
দুইজন কীভাবে ভর্তির প্রস্তুতি নিয়েছেন জানতে চাইলে মানিক জানান, আমাদের বিবাহের এক বছর হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন সময়ে আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। আমরা একসঙ্গে বসে পড়াশোনা করতাম। এক জনের নােট আরেকজন শেয়ার করে পড়তাম। একজনের পড়া আরেকজনকে ধরতাম। এভাবেই আমরা দুইজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি নিয়েছি।
শাকুরা মুহসিনা সুপ্রীম বলেন, আমাদের পড়ার জন্য দুইজনের দুটো টেবিল দুইজনের থাকা সত্ত্বেও আমরা একই টেবিলে পড়েছি, একই শিক্ষকের কাছে পড়েছি আমরা। যেটা সে পড়েছে সেটা আমিও পড়েছি। আর যেটা সে পড়েনি সেটা আমিও পড়িনি— নিয়মটা একইরকম ছিল। এজন্যই ভর্তি পরীক্ষায় আমাদের সিরিয়াল কাছাকাছি এসেছে। যেহেতু আমরা পড়াশোনা একি নিয়মে করেছি তাই আমাদের সিরিয়ালটাও কাছাকাছি এসেছে।
বিয়ের আগ থেকে এখন পর্যন্ত তারা সব সময় পাশে পেয়েছেন পরিবারকে। তাই সাফল্যের সবটুকু অবদান দিতে চান পরিবারকে। মাহাবুব আলম মানিক বলেন, আমাদের সফলতার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান পরিবারের। কারণ তারা মানসিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা না করতো তাহলে আমাদের এতদূর আসা সম্ভব হতো না।
শাকুরা মুহসিনা বলেন, পরিবার থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা ছিল। তারা সব সময় মানসিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য সহযোগিতা করেছে। সবসময় আমাদের বলেছে তোমরা পারবে, কারণ তোমরা দুইজনই মেধাবী।
“পরিবারের সদস্যরা সবসময় ফোনে কথা বলতো, আমাদের বাসায় আসতো। তারা বিয়ে থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আমাদের সাথে আছে।”
যারা আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবে তাদের উদ্দেশ্যে এই দম্পতি বলেন, নিজের জন্য কোনটা ভালো এটা বুঝে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা বিয়ে করে সফল (ভর্তি পরীক্ষায়), তাই বলে সবাই যে বিয়ে করে সফল (ভর্তি পরীক্ষায়) হবে বিষয়টি এমন না। আমরা আমাদের মতো পড়াশোনা করেছি, প্রস্তুতি নিয়েছি।
“আমরা হচ্ছে ব্যতিক্রমী তাই আমরা বিয়ে করে পড়াশোনা করেছি। অনেকে মনে করে এখন আমার বিয়ে হয়েছে আমাকে সংসার করতে হবে, আমাকে শ্বশুর বাড়ি সামলাতে হবে। এগুলো করে অনেকের পড়াশোনা নাও হতে পারে।”