ডেস্ক রিপোর্ট : জয়ের জন্য সর্বোচ্চ স্কোর করেও হেরে গেল বাংলাদেশ। ৩২৬ রানের পাহাড় টপকে বাংলাদেশের পরাজয় নিশ্চিত করল পাকি¯ত্মান। পাকি¯ত্মানের জন্যও এটি সর্বোচ্চ কোনো রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ী হওয়া।
পাকি¯ত্মানের এই ঐতিহাসিক জয়ে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে আফ্রিদি ঝড় আর বাংলাদেশের ক্যাচ মিসের মহড়া। এর মধ্যে দুর্ভাগ্যক্রমে উইকেটে লেগেও বেল না পড়ে টিকে যায় আফ্রিদির উইকেট। টাইগারদের একটি শতক ও তিনটি অর্ধশতকও জয় নিয়ে আসতে পারেনি।
৩২৭ রানের লক্ষ্যে নেমে অপ্রতিরোধ্য ব্যাটিং শুরু করেছিল পাকি¯ত্মানের দুই ওপেনার আহমেদ শেহজাদ ও মোহাম্মদ হাফিজ। অবশেষে ৯৭ রানের এই জুটি ভেঙেছিলেন মুমিনুল। এরপর আরও ৮ রানের মধ্যে দুটি উইকেট হারায় পাকি¯ত্মান। দলকে চাপ থেকে মুক্তি দিতে শেহজাদ শতক হাঁকান। তাকে সাজঘরে পাঠিয়ে আবারও পাকি¯ত্মানকে চাপে ফেলেছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। তবে শহীদ আফ্রিদি মাঠে নেমে ব্যাটে ঝড় তুলে উল্টো চাপে ফেলে দিয়েছিলেন। অবশেষে তাকে রান আউট করে ফেরাতে সমর্থ হল স্বাগতিকরা।
৪৭ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৯৬ রান পাকি¯ত্মানের। ২৫ বলে সাতটি ছয় ও দুটি চারে ৫৯ রানে আউট হন আফ্রিদি। এর আগে ৪৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শর্ট কভারে মুশফিক তার ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হন। ৫৫ রানে অপরাজিত খেলছেন ফাওয়াদ আলম, মাঠে নেমেছেন উমর আকমল।
দলীয় ২১তম ওভারের চতুর্থ বলে হাফিজকে ৫২ রানে ইমরুল কায়েসের তালুবন্দি করতে বাধ্য করেন মুমিনুল। পরের ওভারে সাকিব আল হাসান তুলে নেন মিসবাহ উল হকের উইকেট। গত দুটি ম্যাচে টানা রান আউট হওয়া পাকি¯ত্মানি অধিনায়ক এদিন ৪ রানে বোল্ড হন। টানা দ্বিতীয় ওভারে মুমিনুল শিকার করেন সোহেব মাকসূদকে।
এরপর ফাওয়াদ আলমকে নিয়ে শতরানের জুটি গড়ে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন শেহজাদ। ১০৫ রানের এই জুটি রাজ্জাকের কাছে ভাঙার আগে এই ওপেনার ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক পান ১১৭ বলে। বোল্ড হওয়ার আগে ১২৩ বলে ১২ চার ও এক ছয়ে সাজানো তার ১০৩ রানের ইনিংস।
মাহমুদউল্লাহ পাকি¯ত্মানের পঞ্চম উইকেট পান আব্দুর রেহমানকে দিয়ে। কোনো বল না করে বাংলাদেশকে ৮ রান দেওয়া এই বোলার ব্যাট হাতেও করলেন ৮ রান। ফাওয়াদ ৫০ রানে খেলছেন।
গত কদিন ধরে যা হয়েছে তাতে দুঃখ ভারাক্রাšত্ম ছিল দেশের ক্রিকেট ভক্তরা। পাকি¯ত্মানের বিপক্ষে এক ম্যাচেই সেসব ভুলিয়ে দিল মুশফিকুর রহিমের দল। একদিনের ক্রিকেটে দ্বিতীয় সেরা উদ্বোধনী জুটি হলো এদিন এনামুল হক ও ইমরু“ল কায়েসের ব্যাটে। হলো একটি শতক ও তিনটি অর্ধশতক। টাইগারদের কাছে এমন ম্যাচই দেখার অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশের মানুষ। দুর্দাšত্ম এক দলগত অবদানে বাংলাদেশ মাত্র তিন উইকেট হারিয়ে ৩২৬ রান করেছে। টাইগাররা কেমন হতে পারে তা এবার পাকি¯ত্মানকে দেখিয়ে দিল তারা।
টস জিতে এদিন চতুর্থ বলেই জীবন পান ইমরুল কায়েস। মোহাম্মদ হাফিজের বলে তার শটটি লুফে নিতে ব্যর্থ হন আহমেদ শেহজাদ। এরপর চার ছক্কার ফুলঝুরি। বাংলাদেশের উপর যেন ভর করেছিল অতিমানবীয় শক্তি। একের পর এক বাউন্ডারি দর্শকসারিতে থাকা দর্শকদের উল্লাস থামতেই দেয়নি।
এমনকি ১৯৯৯ সালে মেহরাব হোসেন ও শাহরিয়ার হোসেনের ১৭০ রানের সেরা উদ্বোধনী জুটির রেকর্ডটি হুমকির মুখে পড়েছিল ইমরুল ও এনামুলের জুটিতে। কিন্তু সেটা হতে পারেনি। দ্বিতীয় সেরা উদ্বোধনী জুটি হিসেবেই থামে তাদের ১৫০ রানের জুটি। ৬৩ বলে চারটি চার ও দুটি ছয়ে দশমবারের মতো ৫০ ছুঁয়ে ফেলেন ইমরুল। এর আগে ৫৫ বলে পাঁচ চার ও তিন ছয়ে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন এনামুল।
এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ইমরুল। ৭৫ বলে পাঁচ চার ও দুই ছয়ে ৫৯ রানে মোহাম্মদ তালহার বলে বিতর্কিতভাবে উমর আকমলের গ্লাভসবন্দি হন এই বাঁহাতি। তবে থেমে যাননি এনামুল। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতকটি তিনি পান ১৩১ বলে। ছয়টি চার ও চারটি ছয়ের মারে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে পরের বলে আউট হন তিনি। ততক্ষণে দলের স্কোর ২০৪ রান। মুমিনুলের সঙ্গে তার জুটিটি ছিল ৫৪ রানের।
হাতে ছিল যথেষ্ট উইকেট, দলের স্কোরও দুর্দান্ত। ৪০ ওভারে ২০৫ রান। সময়ক্ষেপণ না করে শুরু থেকে পাকিস্তানি বোলারদের উপর চড়াও হন মুমিনুল ও অধিনায়ক মুশফিক। মাত্র পাঁচ ওভার এক বলে এই জুটিতে ৪৫ রান গড়েন তারা। ইতোমধ্যে ৪৪ বলে ছয়টি চারে টানা দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি পান মুমিনুল। কিন্তু তাকে ৫১ রানে সাজঘরে ফিরতে হয় সাঈদ আজমলের বলে।
এরপর মুশফিকের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং ঝড়। তাদের জুটিতে ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশের এশীয় কাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় রানের মাইলফলকে পৌঁছায় দল। সেবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৮ উইকেটে ৩০০ করেছিল টাইগাররা।
৩২ বলে আট চারে ১৪তম ফিফটি পান মুশফিক। চতুর্থ উইকেটে সাকিবকে নিয়ে তিনি ৩৪ বলে হার না মানা ৭৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। ১৬ বলে ছয় চার ও দুই ছয়ে সাকিব ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। মুমিনুল, মুশফিক ও সাকিবের ব্যাটে শেষ ১০ ওভারেই বাংলাদেশ করে ১২১ রান।
তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এদিন ফিরে এসেছেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তার জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছে নাঈম ইসলামকে। বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন এসেছে আরও চারটি। শামসুর রহমানের জায়গায় ইমরুল কায়েস, মাহমুদউল্লাহ এসেছেন চোটাক্রান্ত সোহাগ গাজীর পরিবর্তে। স্পিনার আরাফাত সানিকে জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছে পেসার শফিউল ইসলামকে। আর রুবেল হোসেনকে বাইরে রেখে নেওয়া হয়েছে আল-আমিন হোসেনকে।
আর পাকিস্তানে সারজীল খানের পরিবর্তে ফাওয়াদ আলম ও পেসার জুনাইদ খানের বদলে আব্দুর রেহমান জায়গা করে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ দল: মুশফিকুর রহিম, আব্দুর রাজ্জাক, আল-আমিন হোসেন, এনামুল হক, ইমরুল কায়েস, মাহমুদউল্লাহ, মুমিনুল হক, নাসির হোসেন, শফিউল ইসলাম, সাকিব আল হাসান ও জিয়াউর রহমান।
পাকিস্তান: আহমেদ শেহজাদ, মোহাম্মদ হাফিজ, সোহেব মাকসুদ, মিসবাহ উল হক, উমর আকমল, ফাওয়াদ আলম, শহীদ আফ্রিদি, মোহাম্মদ তালহা, উমর গুল, সাঈদ আজমল ও আব্দুর রেহমান।