নিজস্ব প্রতিবেদক,১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নির্যাতনের শিকার অভিযোগকারী ওই ছাত্রীর বক্তব্য শুনেছে তদন্ত কমিটি। কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই ছাত্রী এখন দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে অবস্থান করছেন।
ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসানুল হকের নেতৃত্বে হল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বানে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হলে প্রবেশ করেন তিনি। এ সময় তার বাবা ও মামাকেও হলে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
আরো পড়ুন: ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও: ইবির দুই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ
পরে ভুক্তভোগীর সঙ্গে এক ঘন্টা কথা বলেছে তদন্ত কমিটি। এ সময় ভুক্তভোগীর লিখিত বক্তব্যও নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্যাতনের স্পটগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
এছাড়াও এ বিষয়ে তথ্য প্রমাণ কারও কাছে থাকলে তা তদন্ত কমিটির কাছে দেয়ার জন্য উন্মুক্ত গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
এ নিয়ে কমিটির সদস্য ইবির আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেবা মণ্ডল বলেন, ঘটনার কিছু তথ্য ও প্রমান আমরা পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে তা এখন বলা যাচ্ছে না। আর আগামী ২০ তারিখে অভিযুক্তদের বক্তব্য শোনার জন্য ডাকা হয়েছে।
এদিকে অভিযোগকারী ওই ছাত্রীর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশকে কেন্দ্র করে প্রধান ফটকে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তাও। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।
তাকে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দিতে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন মেয়েটির নিরাপত্তার জন্য তার সঙ্গে কথা বলে।
শনিবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা-পুলিশের একটি টহল দল দেখা যায়।
থানার ওসি আননূন যায়েদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষের চাওয়া মোতাবেক পুলিশের একটি দল প্রধান ফটকে রাখা হয়েছে। প্রক্টর পুলিশকে মূল ফটকের সামনেই থাকতে বলেছেন।’
প্রক্টর শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আইন মোতাবেক মেয়েটির জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার সঙ্গে কথা হয়েছে, আরও কথা হবে। ক্যাম্পাসে অথবা ক্যাম্পাসের আশেপাশে যেকোনো জায়গায় থাকতে চাইলে তার নিরাপত্তার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে গত রোববার রাতে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে নবীন ওই শিক্ষার্থীকে।
ওই ছাত্রী অভিযোগে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা নির্যাতন চালিয়েছে। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল, ময়লা জিনিসপত্র জিহ্বা দিয়ে চাটানোসহ অমানবিক নির্যাতন করেন। এমনকি এ কথা কাউকে বললে মেরে ফেলার ও শিয়াল কুকুর দিয়ে খাওয়ানোর হুমকি দেন ওই ছাত্রলীগ নেত্রী। এ ছাড়াও ভিডিও ভাইরাল করারও হুমকি দেয়া হয়।’
নিরাপত্তার ভয়ে ওই ছাত্রী ১৩ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে ফেরেন।
তবে অভিযুক্ত ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। এসব উল্লেখ করে তিনিও প্রশাসনের কাছে পাল্টা অভিযোগপত্র দিয়েছেন। নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপবাদ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আসার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে অভিযুক্ত ছাত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তাবাসসুমকে হল থেকে বের করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।