ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) উপাচার্যের কথিত অডিও ফাঁসের পর এবার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের আরেক অডিও ফাঁস হয়েছে। সাবেক ডাইরেক্টর অফ প্ল্যানিং (পিডি) ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানের কণ্ঠের মতো অডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে এই অডিও ‘সাথী খাতুন’ নামের একটি আইডি দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। লেনদেন সংক্রান্ত পৃথক চারটি সময়ের কথোপকথন একসঙ্গে যুক্ত করে ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপিংটি প্রকাশ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আরো পড়ুন: ”প্রতিটি বিভাগেই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব”
অডিও’র প্রথম অংশে মঈন নামের একজন বলেন- ‘স্যার, আসসালামু আলাইকুম স্যার। আমি মঈন বলছিলাম। স্যার, আজকে তো ওইটা জমা দিয়ে দিলাম। টাকা কোথায় কখন প্লেস করবো আপনাকে, বললে আমি ওইভাবে প্রিপারেশন নিতাম আর কি।’ এ সময় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান সদৃশ কণ্ঠে বলা হয়- ‘আপনি, ৩টার সময় কুষ্টিয়া এসে দিতে হবে।’
তখন মঈন বলেন, ‘৩টার সময় স্যার পারবো না। সাড়ে ৪টার সময় পারবো।’ আলী হাসান- ‘সাড়ে ৪টার সময়ই দিয়েন।’ মঈন- ‘জ্বী স্যার, সাড়ে ৪টার সময় পাবো। চার লাখ টাকা পারবো। আপনার টোটাল টাকাটাই পাবো। কিন্তু আপনার চার লাখ টাকা সাড়ে ৪টা থেকে পাবো। ৫টা/সাড়ে ৫টার ভেতর দিয়ে দিব।’
আলী হাসান- ‘ফোনে এগুলো বলার দরকার নাই।’ মঈন- ‘আমি সেইফ জায়গায় আছি।’ আলী হাসান- ‘না না, ফোনে এগুলো বলার দরকার নেই।’ মঈন- ‘ওহ্ আচ্ছা, আচ্ছা ঠিক আছে।’ আলী হাসান- ‘আমি শুধু ফোনে বলে দিব কোন জায়গা।’ মঈন- ‘ওকে, ধন্যবাদ স্যার।’
অডিওর দ্বিতীয় অংশে রেজিস্ট্রার আলী হাসান বলেন, ‘কে বলছেন?’ বিপরীত পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘মঈন সাহেব বলছিলাম, আপনি কে বলছিলেন?’ আলী হাসান- ‘আমি ডাইরেক্টর প্ল্যানিং বলছিলাম।’ মঈন- ‘ও আচ্ছা, স্যার। ওইটা সাড়ে ৪টার দিকে পাবেন।’
আলী হাসান- ‘আচ্ছা ঠিক আছে। ওইটা একটু দেখেশুনে বলবেন।’ মঈন- ‘না স্যার, বলব না। আামি শুধু ইঙ্গিত দিব আপনাকে। যে আমার হয়ে গেছে, আমি কোথায় আসবো।’ আলী হাসান- ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
অডিওর তৃতীয় অংশে রেজিস্ট্রার আলী হাসান মঈনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘হয়েছে?’ মঈন- না, এখনও হয়নি স্যার। বসে আছি ব্যাংকে। কনফার্মেশনের জন্য বসে আছি ঢাকার।’ এ সময় আলী হাসান বলেন, ‘আচ্ছা, আমি আছি। শহরের ভেতরেই আছি।’
অডিওর চতুর্থ অংশে মঈন বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম স্যার।’ আলী হাসান- ‘কী অবস্থা?’ মঈন- ‘স্যার, একটু অপেক্ষা করতে হবে। স্যার, একটু অপেক্ষা। কোথাও বসে চা-টা খান।’
আলী হাসান- ‘কতক্ষণ লাগবে আর?’ মঈন- ‘লাগবে… আধ ঘণ্টা লাগবে স্যার।’ আলী হাসান- ‘কত কত?’ মঈন- ‘ঢাকা থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়েছে স্যার।’
আলী হাসান এ সময় বলেন, ‘আরে বাবা, এদিকে ব্যাংক বন্ধ করে দিব তো!’ মঈন- ‘আরে বইলেন না। ঢাকা থেকে আবার ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়েছে। কিভাবে যে করেছি আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। আপনি অল্প একটু অপেক্ষা করেন স্যার। একটু অপেক্ষা করেন, আসতিছি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি এমদাদুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই বিব্রত। কর্মকর্তা সমিতি বিতর্কিত হয়ে গেল। আমরা প্রাথমিকভাবে তার কণ্ঠের সাদৃশ্য পেয়েছি। কর্মকর্তা সমিতির একটি জরুরি মিটিং ডেকেছি। মিটিংয়ে যে সিদ্ধান্ত হবে সে অনুযায়ী আমরা উপাচার্যের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করব।’
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত না। এমন ঘটনা ঘটলে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারি। দেখি, বিষয়টি নিয়ে কী করা যায়।’
প্রসঙ্গত, এর আগে সম্প্রতি কয়েকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের কণ্ঠসদৃশ একাধিক অডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এছাড়াও এসব ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বরে করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।