স্ত্রীর অধিকার পেতে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলামের কার্যালয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন জিনাত আরা খাতুন নামের এক নারী। বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
জিনাত আরা খাতুন দিনাজপুরের কলেজিয়েট গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক পদে রয়েছেন বলে নিজেই জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন: শিক্ষকরা দেরিতে কলেজে এলে বেতন কাটা
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এক নারী সন্তান নিয়ে ইউএনওর কার্যালয়ে যান। এ সময় ওই নারীর পরিবারের লোকজন সঙ্গে ছিলেন। সেখানে হৈচৈ শুরু হয়। একপর্যায়ে ইউএনও ওই নারীর মোবাইল কেড়ে নিয়ে আনসার সদস্যদের দিয়ে হেনস্তা করে বাইরে বের করে দেন। তখন ওই নারী ইউএনওর কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে বাস থামিয়ে অনশন শুরু করেন। এ সময় কিছুক্ষণ ধীর গতিতে যান চলাচল করে। এ নিয়ে বেশ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে জানা যায় ওই নারী ইউএনওর স্ত্রী ছিলেন। ঘটনার পর ইউএনওর স্ত্রীকে নিয়ে উপজেলা পরিষদে গিয়ে কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বসে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন এবং সুবিচার করার প্রতিশ্রুতি দেন।
জিনাত আরা খাতুনের দাবি, ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্টহাউসে তাদের বিয়ে হয়। তাদের একটি ছেলে সন্তান হয়। আরেকটি সন্তান গর্ভেই নষ্ট করতে বাধ্য করেন ইউএনও মো. আরিফুল ইসলাম। চলতি মাসের ২৪ সেপ্টেম্বর ইউএনও একতরফা তালাক দেন। এটি তিনি জানতেন না। সব মাধ্যম থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় তিনি স্ত্রীর মর্যাদা পেতে সন্তানকে নিয়ে ইউএনও কার্যালয়ে এসে অবস্থান নেন।
জিনাত আরা খাতুন বলেন, এখন আমি জানতে পেরেছি তার স্ত্রী আছে। কিন্তু আমাকে বিয়ের সময় বলেছিল তার অন্য কোনো স্ত্রী-সন্তান নেই। আজ কেন তার স্ত্রীর বের হলো? সে কেন আমাকে বিয়ে করলো? সন্তান জন্ম দিল। আমি কোনো অশিক্ষিত মানুষকে বিয়ে করিনি। ২০ লাখ ১০১ টাকা দেনমোহরে সে আমাকে বিয়ে করেছে, কাবিননামা আছে। ধর্মীয় ও আইনানুগভাবে সে আমার স্বামী। সে কি ছোট বাচ্চা? আরেক সংসার বাঁচাতে গিয়ে আরেক স্ত্রীকে ভুলে গেল? আমার কী অপরাধ? বিষয়টি নিয়ে আমি ডিসি (জেলা প্রশাসক) স্যারকে জানিয়েছি। তিনি আমাকে বলেছেন একজন নাগরিক হিসেবে আপনার যা করণীয় তাই তাই করেন। আমি ডিভোর্স চাই না, টাকা চাই না। আমি আমার সন্তানের বাবাকে চাই। ছেলে তার বাবার আদরটুকু পাবে এটাই চাই। সামাজিক স্বীকৃতি চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও আরিফুল ইসলাম বলেন, সে (জিনাত আরা খাতুন) ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিল। এখন আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। সে সিনক্রিয়েট করার জন্য এখানে এসেছিল। এটা ব্যক্তিগত বিষয় ছিল। আমি আইনগতভাবে সমাধান করেছি।
সন্তান প্রসঙ্গে ইউএনও বলেন, তার তো চরিত্রেরই ঠিক নেই। এই বিষয়গুলো নিয়ে সে ইস্যু তৈরি করছে।
আক্কেলপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ঘটনাটি আপনারা যা শুনেছেন আমিও তাই শুনেছি। ঘটনার একপর্যায়ে উনি (জিনাত আরা খাতুন) সড়কে গিয়ে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। পরে পাঁচ মিনিটের মতো গাড়ি কম চলে। পরে উনি একপাশে ছিলেন, অন্য পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করেছে।
তবে এ বিষয় নিয়ে কোনো পক্ষই অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম।
এ ব্যাপারে জানতে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজীর মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।