আর্থিক সংকটের কারণে নিয়োগ বাতিল – বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন।

ডেস্ক,২ এপ্রিল: তিন পদে ৬৯ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে প্রায় পাঁচ বছর আগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন। প্রার্থীরা সেই পদে আবেদনও করেছিলেন। দীর্ঘ সময়ে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয়েছে। সেখান থেকে প্রার্থী বাছাই করে মৌখিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত নিয়োগ হবে—এমন সময় নিয়োগ বাতিল করল কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি থেকে বলা হচ্ছে, আর্থিক সংকটের কারণে নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ বাতিল করাকে অন্যায় বলে মনে করেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেন, ওই প্রতিষ্ঠান নিয়োগপ্রার্থীদের সঙ্গে এ ধরনের কাজ করতে পারে না। এটা তাঁদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন ২০১৩ সালে অক্টোবর ও নভেম্বরে দৈনিক যুগান্তর, ইত্তেফাক ও ডেইলি স্টার—এই তিনটি দৈনিক পত্রিকায় সহকারী ব্যবস্থাপক (উৎপাদন), সহকারী ব্যবস্থাপক (সম্প্রসারণ/বীজ পরিদর্শন) এবং সহকারী ব্যবস্থাপক (জেনারেল ক্যাডার)—এই তিন পদে ৬৯ জনকে নেওয়ার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এসব পদে কয়েক হাজার প্রার্থী আবেদন করেন। পরে ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা এবং ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রথম শ্রেণির এই তিনটি পদের নিয়োগের ফলাফল ঝুলে আছে দীর্ঘ দিন ধরে।

চাকরিপ্রার্থীরা জানান, তাঁদের প্রতিবাদের ফলে দফায় দফায় ফলাফল প্রকাশের তারিখ দেওয়া হলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। এরপর চাকরিপ্রার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৫ মার্চ চিনি শিল্প ভবন ঘেরাও ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। কিন্তু নিয়োগ চূড়ান্ত না করে উল্টো নিয়োগ বাতিল করে দেয় কর্তৃপক্ষ। গত বুধবার এ নিয়োগ বাতিলসংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন।

একাধিক ভুক্তভোগী প্রার্থী  বলেন, তাঁরা এই পদে আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত নিয়োগ পাওয়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। অনেকে ঢাকার বাইরে থেকে এসে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা দিলেন। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগের আশায় বসে আছেন। কিন্তু এখন শোনেন, সেটি বাতিল। কোনো সভ্য দেশে এটা হতে পারে? এটি মেনে নেওয়া যায় না।

তাঁরা বলেন, চাকরি পাওয়ার জন্য ২০ থেকে ২২ বার তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় কর্তৃপক্ষ বলেছিল, তাদের আরও লোক দরকার। জনবলের অভাবে তারা মিলগুলো চালাতে পারছে না। আর এখন বলছে টাকার অভাব। এটা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই নিয়োগ বাতিল নিয়ম অনুসারে হয়নি বলেও অভিযোগ তাঁদের।

আরেক প্রার্থী বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে আমরা নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগ পেতে যাব, সেই সময় নিয়োগ বাতিল করা হলো। এটা কী ধরনের অন্যায়?

প্রার্থীরা জানান, তাঁদের অনেকের চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। কেউ ৩০ বছর বয়সে এই চাকরির আবেদন করেছিলেন। এখন তাঁদের বয়স ৩৫ পেরিয়ে গেছে। এই নিয়োগ না হলে তাদের বেকার থাকতে হবে।

করপোরেশনের চিফ অব পার্সোনেল মো. আবুল রফিক বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ভালো না। আমরা আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত। দুই-তিন মাস ধরে আর্থিক সংকটের কারণে আমাদের বেতন বকেয়া পড়ে আছে। চাষিদের আখের দাম দিতে পারছি না। আবার চিনির বাজারও ভালো না। সব মিলে নিয়োগ দিলে তাঁরা আর্থিক সমস্যায় পড়বেন। এই জন্য আমাদের বোর্ড সভায় ওই নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।’ এভাবে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ বাতিল করতে পারেন কি না জানতে চাইলে তিনি এর কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।