ঢাকা : উপজেলা পর্যায়ে আরও ১৫৪টি বেসরকারি কলেজ সরকারি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। ঈদের ছুটিতেই কলেজ জাতীয়করণের কাজ চূড়ান্ত হয়।
এর আগে কয়েক মাসে আরও ৪৫টি কলেজ সরকারি করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা আইন ও এমপিও নির্দেশিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
শিক্ষা আইনে নোট-গাইড ও কোচিং বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের জন্য প্রচলিত আইনে বিচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া পাঠ্যবই, কারিকুলাম, শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, এমপিওসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং কলেজ জাতীয়করণসংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক এএস মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি শনিবার বিকালে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৫৪টি কলেজ জাতীয়করণের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। এখন আমরা আইন ও বিধি সামনে রেখে এসব কলেজের বিভিন্ন দিক আরও পর্যালোচনা করব। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, শিক্ষক-কর্মচারীসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করব। প্রতিটি কলেজের প্রোফাইল তৈরির পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের পরই এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করা হবে।
জানা গেছে, জাতীয়করণকৃত এই ১৫৪টি কলেজই উপজেলা পর্যায়ের। যেসব উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই, সেসব উপজেলাকে এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন নীতিনির্ধারক জানান, গত কয়েক মাসে আরও ৪৫টি কলেজ সরকারি করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এসব কলেজ প্রধানমন্ত্রী সরকারি করেছেন। তবে ওই ৪৫টি কলেজ প্রধানমন্ত্রী সরকারি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যে কারণে সরকারি কলেজবিহীন উপজেলার কলেজ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি কলেজকে আগে সরকারি করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অপর অতিরিক্ত সচিব জানান, কলেজ সরকারি করার ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে- বদলি হতে পারবেন না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আলাদা অনুশাসনও আছে বলে জানা গেছে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আইকে সেলিমউল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নতুন জাতীয়করণকৃত এসব কলেজের শিক্ষকদের ৫ বছরের মধ্যে বদলি না করার ব্যাপারে অনুশাসন দিয়েছেন বাস্তব কারণে। তা হচ্ছে, উপজেলা পর্যায়ে অনেকেই চাকরি করতে যেতে চায় না। নতুন সরকারি হওয়ার পর অনেকেরই শহরাঞ্চলে বদলি হওয়ার পথ তৈরি হয়। এতে সংশ্লিষ্ট কলেজ ও ছাত্রছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের রক্ষার্থেই প্রধানমন্ত্রী এমন অনুশাসন দিয়েছেন। আমরা সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে কলেজ জাতীয়করণের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সিনিয়রিটি, মামলা প্রবণতা- এর থেকে গোটা শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি ঝুলে যাওয়াসহ অন্যান্য সমস্যার আশংকা আছে। কেন না, অতীতে কলেজ সরকারি হওয়ার পর এ ধরনের সমস্যা হয়েছে। মামলার কারণে ১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বন্ধ ছিল। বিসিএস থেকে নতুন নিয়োগ পেয়ে কর্মকর্তা আসার পরই জাতীয়করণ হওয়া এসব কলেজের শিক্ষকদের জুনিয়র হয়ে যাবেন। তখনই মামলার প্রবণতা শুরু হতে পারে। এতে পদোন্নতি আটকে যেতে পারে।’ এ সমস্যা থেকে উত্তরণে তিনি আত্তীকৃত কলেজের শিক্ষকদের ‘নন-ক্যাডার’ কর্মকর্তা এবং ওইসব কলেজে অধ্যাপক পর্যন্ত পদ সৃষ্টির পরামর্শ দিয়ে বলেন, ১৯৮৪ সালে ফেনী কলেজ সরকারি হয়েছে। সেখানে ১৬টি বিষয়ে অনার্স-ডিগ্রি আছে। কিন্তু ৩১ বছর পরও সেখানে অধ্যাপকের পদ মাত্র ৩টি। ফলে বাধ্য হয়েই যারা পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের অন্য কলেজে পদায়ন করতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, জাতীয়করণের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে আসা এবং সরাসরি বিসিএসের মাধ্যমে আসা শিক্ষকদের মধ্যে দুই যুগের বেশি দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে।
এমপিও নির্দেশিকায় এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় নতুন পদ সৃষ্টি করে আরও শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নিশ্চিত করেছেন।