বিসিএস নন-ক্যাডার পদে অপেক্ষমাণ সবাই চাকরি পেলেন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ ৩৫ বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও যারা ক্যাডার পদ পাননি, তাদের মধ্য থেকে আরও এক হাজার ৪৬৬ জনকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো কোন বিসিএস পরীক্ষায় নন-ক্যাডার পদের জন্য অপেক্ষমাণ সকল প্রার্থীই পেলেও প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক পদে দেয়া হয়নি কাউকে। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
এ বিসিএসে ক্যাডার পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন যেখানে দুই হাজার ১৫৮ সেখানে পিএসসির উদ্যোগে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ পেলেন আরও বেশিসংখ্যক; দুই হাজার ১৬৩ চাকরি প্রার্থীকে। বিসিএসে নন-ক্যাডারের জন্য অপেক্ষমাণ থাকা সকল প্রার্থীর নিয়োগের ঘটনাকে ইতিবাচক হিসেবে অভিহিত করেছেন চাকরি প্রার্থীরা।
নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা অনুযায়ী মেধাক্রম ও বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার নন-ক্যাডার পদের নিয়োগের সুপারিশ করেছে সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি)। একদিকে প্রথমবারের মতো অপেক্ষমাণ সকল প্রার্থীর নিয়োগ অন্যদিকে ক্যাডার পদ থেকেও নন-ক্যাডার পদে বেশি প্রার্থীর চাকরি নিশ্চিত করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। তিনি বলেছেন, এটা আমাদের দেশের মেধাবী যুব সমাজের জন্য বড় একটা কাজ। এ কাজ আমরা করতে পেরেছি সকল মন্ত্রণালয়ের সচিব, আমাদের সকল সদস্য, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সার্বিক সহযোগিতার কারণে। নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেছেন, ৩৫ বিসিএসের মাধ্যমে এক দফায় ১৩৯ জনকে প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডারের বিভিন্ন পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছিলাম আমরা। আরেক দফায় ৩৯৮ জনকে এবং পরে আরেক দফায় ১৬০ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল। মোট ৬৯৭ জনকে প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছিলাম।
২০১৪ সালের ১৭ জুন নন-ক্যাডার নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা ২০১০ সংশোধন করে বিসিএস উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগের সুযোগ তৈরি করা হয়। জানা গেছে, নিয়ম অনাযায়ী ৩৫ বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও যারা ক্যাডার পাননি তাদের মধ্যে যারা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নন-ক্যাডার পদে যোগ দিতে আগ্রহী, তাদের কাছে আবেদন চায় কমিশন। তাতে দুই হাজার ৬০০ জন আবেদন করেন। ৩৫তম বিসিএসের নন-ক্যাডারে নিয়োগের জন্য গেল বছর ৩০ আগস্ট সব মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় পিএসসি। এ ছাড়া চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের বিশেষ উদ্যোগে বেশিসংখ্যক প্রার্থী যেন নিয়োগ পায় সে জন্য কোটার প্রার্থী না পাওয়া গেলে সেখানে মেধাবীদের নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। পরে সেটি মন্ত্রিপরিষদে গেলে কোটা শিথিলের সুপারিশ করা হয়।
২০১৪ সালে বিধিমালা সংশোধন করে প্রথম শ্রেণীর নন- ক্যাডার পদের পাশাপাশি দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা পদেও নিয়োগের ব্যবস্থা রাখা হয়। তবে পরবর্তী বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত আগের বিসিএস থেকে নন- ক্যাডারে নিয়োগ চলে। এই নিয়ম কার্যকর থাকে পরবর্তী বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত। পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ৩৫তম বিসিএসের ফল প্রকাশের পরই আমরা সব মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শূন্য পদের তালিকা চেয়েছি। এবার প্রথমবারের মতো আবেদনের পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে হয়েছে। আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে যে চাহিদাপত্র পেয়েছি তার ভিত্তিতে প্রথমে প্রথম শ্রেণীর বিভিন্ন পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছি, এরপর দ্বিতীয় শ্রেণীর বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়া হলো।
বৃহস্পতিবার সর্বশেষ যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে আছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজী) ২১৭ জন, সামাজিক বিজ্ঞান পদে ১১০, ভৌতবিজ্ঞান পদে ১০৯, ব্যবসায় শিক্ষা পদে ১১০, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে ৫৪৫, রাজস্ব বোর্ডের কর পরিদর্শক পদে ৮০,
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গুপ্ত সংকেত পরিদফতরের সহকারী সাইফার অফিসার পদে একজন, আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতরের নির্বাহী অফিসার ১৬, যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদফতরের এক্সামিনার অব এ্যাকাউন্টস ২, সমাজসেবা অধিফতরের বিভিন্ন পদে ৩৭, শ্রম অধিদফতরের বিভিন্ন পদে ৭, কলকারাখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদফতরের বিভিন্ন পদে ১৭, পারিবেশ অধিদফতরে ২, গণযোগ অধিদফতরে ২২, তথ্য অধিদফতরে ১০, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ২, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে ২, মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতরে নিয়োগ পেয়েছেন ৫।
এদিকে এক প্রশ্নের জবাবে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেছেন, এই মুহূর্তে আমরা একসঙ্গে তিন-চারটি পরীক্ষা নিয়ে কাজ করছি। ৩৫তম বিসিএসের নন- ক্যাডারদের রেজাল্ট হলো। ৩৬তমের ফল তৈরি করছি। ৩৭তমের মৌখিকের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, ৩৮তমের আবেদন ফর্ম গ্রহণ করছি। চারটি পরীক্ষা যদি চার বছরের মধ্যে শেষ করি, তাও এক বছর সময় লাগছে। একটা বিসিএস পরীক্ষা মানে শুধু একটা পরীক্ষা নয়। ২৭টি ক্যাডারের পরীক্ষা। এর মধ্যে সাবক্যাডার আছে। শুধু শিক্ষা ক্যাডারেই ৭৯ রকমের বিষয় আছে।
এছাড়া এই ৭৯ রকমের প্রশ্ন করা, বিশেষজ্ঞ আনা, খাতাও দেখাতে হয় ৭৯ রকমের শিক্ষককে। এই বিপুল কর্মযজ্ঞে তাই সময় লাগে। দেড় বছরের বেশি সময় লাগছে। আমরা রোডম্যাপ করেছি। যদি দেড় বছরের মধ্যেও শেষ করতে পারি, সেটাও অনেক ভাল। আরও দ্রুত করতে হলে কাঠামোগত কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। সেটি নিয়ে কাজ করছি।
তিনি জানান, আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে ৩৬তম বিসিএসের রেজাল্ট দিয়ে দেব। এটি এর আগেও হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ৩৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে নিতে পারব। ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অক্টোবরের মধ্যে নিতে পারব বলে আশা করছি।