আদিতমারীতে কর্মসৃজন প্রকল্পে সেনাসদস্য, স্কুল-শিক্ষক, ব্যবসায়ীর নাম!

লালমনরিহাটঃ কর্মহীন শ্রমজীবীদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু করেছে সরকার। তবে বঞ্চিত-অসহায়দের এই তালিকায় সেনাসদস্য, স্কুল-শিক্ষক ও ব্যবসায়ীসহ প্রভাবশালীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। তারা মজুরির টাকা উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। এর ফলে প্রকল্পের সুফল হচ্ছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার শ্রমজীবী প্রান্তিক জনগোষ্ঠি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠে কাজ না থাকায় কর্মহীন প্রান্তিক শ্রমজীবীদের কর্মসংস্থান সৃষ্ঠির লক্ষ্যে ৪০ দিনের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। এতে সপ্তাহের ৫দিন সরকারিভাবে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করছে কর্মসৃজন প্রকল্পের ৮ হাজার ৭৪৭ জন শ্রমিক। দৈনিক মজুরি হিসেবে দুই শত টাকা পাচ্ছেন তারা। প্রতি বছর কর্মহীন সময়ে এ প্রকল্প চালু করা হয়।

অভিযোগ যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে ৪টিতে পুরাতন তালিকার নাম সংশোধন করে চূড়ান্ত করা হলেও আদিতমারী উপজেলা পরিষদ ২০১০ সালের পুরাতন তালিকা দিয়েই কাজ শুরু করেছেন। যে তালিকার অনেকেই এখন এলাকায় নেই। থাকলেও কেউ হয়েছেন স্কুল শিক্ষক, ইউপি সচিব, ইউপি সদস্য, কেউ হয়েছেন সেনাবাহিনীর  সদস্য, কেউ করছেন ব্যবসা। ফলে এসব শ্রমিক কাজে না গিয়েও মজুরির টাকা তুলে ভোগ করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের তালিকায় দেখা যায়, ২২৭ নং কার্ডধারী মফিজুল হক। যিনি এখন মহিষাশ্বহর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। ১৫৭ নং কার্ডধারী ইমদাদুল হক বাড়ি-গাড়ির মালিক, চাকরি করেন বন্দরনগরী চট্ট্রগ্রামে। ২০২ নং কার্ডধারী তোজাম্মেল হক প্রতিষ্ঠিত সার ব্যবসায়ী সাবেক ইউপি সদস্যের ছেলে। ৪৬ নং কার্ডধারী লেবু মিয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য। ডিস ব্যবসায়ী মানিক মিয়ার কার্ড নং ৬২। সাবেক সংরক্ষিত নারী সদস্যা শামছুন নাহারের স্বামী আব্দুল হামিজের কার্ড নং ১৩৫।

কর্মসৃজন প্রকল্পে শ্রমিকদের তালিকায় এমন আরও অনেক নাম আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যারা কাজে না গিয়েও এ সুযোগ গ্রহণ করছেন। এর ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন বেকার শ্রমিকরা।

এ সকল নাম পরিবর্তনের আবেদন করেও সুফল পাননি বলে দাবি করেন মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা। ওই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতি মিয়া জানান, এ ইউনিয়নে প্রায় ২০/২২টা ভুয়া শ্রমিকের নাম রয়েছে। যা পরিবর্তন করে প্রকৃত শ্রমিকদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ে আবেদন করেও কোনও ফল পাননি।

আদিতমারী উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসার (পিআইও) মফিজুল ইসলাম জানান, ‘এ উপজেলায় মোট এক হাজার ৭২৪ জন শ্রমিক কর্মসৃজন প্রকল্পে রয়েছেন। যারা অনুপস্থিত থাকবেন তাদের মজুরির টাকা কেটে রাখা হবে। নাম পরিবর্তন করার কোনও সুযোগ নেই।’

লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলে তার কারণ উল্লেখ করে ইউনিয়ন পরিষদ সেই শ্রমিকের নাম পরিবর্তনের আবেদন করলে তা অবশ্যই পরিবর্তন করা সম্ভব। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।’

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই তালিকাটি চার-পাঁচ বছর আগে করা হয়েছিল। কীভাবে কর্মজীবীদের নাম তালিকায় রাখা হয়েছে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।’

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।