সাত বছরেও দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা কার্যকর হয়নি
ডেস্ক,১৩ ডিসেম্বরঃ
মর্যাদা ও সম্মান বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাত বছর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা ঘোষণা করলেও এখনও তারা রাষ্ট্রের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনীহা ও গাফিলতিতে দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা আজও কার্যকর হয়নি। গেজেট জারি হয়নি পদমর্যাদা ও বেতন স্কেলের। তাদের বেতন আগের কাঠামোতেই রয়েছে। এতে প্রধান শিক্ষকরা চরম ক্ষুব্ধ। বিষয়টি নিয়ে তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
আরো পড়ুনঃ শিক্ষকদের বদলিতে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ, দুদকের অভিযান
প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদমর্যাদা ও জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে বেতনের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীতের সাত বছরেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষক সমাজ চরম হতাশ। পাঠদানের ওপরে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও বেতন বৈষম্য দূর করতে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
শিক্ষকরা জানান, সামাজিকভাবে প্রধান শিক্ষকরা যথেষ্ট সম্মানের অধিকারী হলেও চাকরির রাষ্ট্রাচারে এখনও একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। যে কোনো সরকারি অফিসের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর চেয়ে নিঃসন্দেহে একজন প্রধান শিক্ষককে অনেক বেশি দাপ্তরিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। অথচ পদটি তৃতীয় শ্রেণির হওয়ায় দীর্ঘদিন এ নিয়ে তারা হতাশায় নিমজ্জিত ছিলেন। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদার ঘোষণা দেওয়া হয়।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ক ও উত্তর পূর্ব চর লামছিপাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীলিপ কুমার মণ্ডল বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সহকারী শিক্ষকদের ও প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে লাখ লাখ শিক্ষকের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজ সমকালকে বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির নন-গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা দিয়ে সরকার প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের ১১তম গ্রেড ও ১২তম গ্রেড নির্ধারণ করে। অথচ দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা পাওয়া পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, নার্স, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন সচিবদেরও দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক সমিতির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক স্বরুপ দাস বলেন, পদমর্যাদা উন্নতির পর সাত বছর অতিবাহিত হলেও এখনও তারা দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে নামেই রয়ে গেছেন তারা রাষ্ট্রের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে। অথচ দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা পাওয়া পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, নার্স, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন সচিবদেরও দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে।
জানা যায়, ইতোমধ্যে ৩৪তম বিসিএস থেকে ৮৯৮ জন, ৩৬তম বিসিএস থেকে একাধিক প্রার্থীকে প্রধান শিক্ষক পদে সুপারিশ করলেও, অনেকে যোগদান করেননি। আর করলেও দশম গ্রেডে অন্য চাকরি পেলে শিক্ষকতা ছেড়ে চলে গেছেন।
প্রধান শিক্ষকরা আরও জানান, বর্তমানে প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির হলেও তারা বেতন পান ১১তম গ্রেডে। অথচ দ্বিতীয় শ্রেণির অন্য সব চাকরিজীবীরা দশম গ্রেডে বেতন পান। নন-ক্যাডার দ্বিতীয় শ্রেণির পদে অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তারা জাতীয় বেতন কাঠামোর দশম স্কেলে বেতন পান।
পদমর্যাদা ও বেতনের প্রশ্নে প্রধান শিক্ষকরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডসহ গেজেটেড পদমর্যাদা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন উভয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেড পদমর্যাদা ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে আদেশ কার্যকর করতেও বলা হয়। পরে সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। আপিল বিভাগের প্রথম শুনানি আজ রোববার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ জানতে চাইলে এ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু বকর সিদ্দিক সমকালকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলুন।
মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম সমকালকে বলেন, দশম গ্রেডে বেতন চেয়ে প্রধান শিক্ষকরা উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন। আদালত রায় দিয়েছেন। রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ, অর্থাৎ অর্থ মন্ত্রণালয় আপিল করেছে। শুনানি শেষে আদালত যা রায় দেবেন, তাই বাস্তবায়িত হবে।