অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয় যেসব কারণে

Image

অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য অত্যন্ত জরুরী একটি ওষুধ। কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার করলে দেহের রোগ- জীবাণু ধ্বংসে সেই ওষুধ আর কাজ করে না।

বরং তারা আরও শক্তিশালী হয়ে সেই ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ওষুধটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। অর্থাৎ এটি তখন শরীরের রোগ সারাতে ব্যর্থ হয়। এভাবে ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার করতে থাকলে একসময় সব অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের জন্য অকেজো বা ব্যর্থ হয়ে যাবে। এসব অ্যান্টিবায়োটিকের সবগুলো যদি কারো শরীরে অকেজো বা ব্যর্থ হয়ে যায়, তাহলে তার মৃত্যু অনিবার্য। কারো শরীরে এই অ্যান্টিবায়োটিক অকেজো বা ব্যর্থ হওয়াকেই বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।

এদিকে কোন ব্যক্তি যদি অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার করতে করতে প্রায় সবগুলো অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যান। অর্থাৎ তার শরীরের রোগ-জীবাণুগুলো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধকে অকার্যকর করে নিজস্ব কোষের মিউটেশন ঘটায়। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির শরীরের জীবাণুগুলো অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর শক্তিশালী হয়ে উঠে। এভাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হলে ছোট খাটো রোগে আক্রান্ত হয়ে কারো কারো সহজে মৃত্যু হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের পর অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স-এর কারণে আর কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেরই কার্যকারিতা থাকবে না। ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের কারণে দিন দিন ওষুধের প্রতিরোধী ক্ষমতা হারাচ্ছে বলে একইরকম মতামত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা। এ সমাস্যা মহামারি আকার ধারণ করার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশ আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে করোনা ভাইরাসের চেয়ে বেশি সংকটে পড়বে।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের মত ভয়াবহ স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের ঘটনার মূল কারণগুলো কী তাহলে চলুন জেনে নেই।

যেসব কারণে আপনিও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হতে পারেন:

* প্রাকৃতিক কারণ: অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের ক্রমাগত প্রকাশের কারণে প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বিকশিত হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের ব্যবহার বা সংশ্লিষ্ট মানুষের ক্লিনিকাল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যবহারেরও আগে কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবে বিকশিত হয়েছে।

* নিজের মন মতো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণ: নিজে নিজে বা অন্য ব্যক্তির পরামর্শে (যিনি একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক নন) ওষুধ গ্রহণ করাকে দেহে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বিবর্তনের প্রাথমিক কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারে আপনিও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যেতে পারেন। আরও সহজ কথায় যেকোন অসুখে নিজের মন মতো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ঘন ঘন খেলে দেহে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরী হতে পারে।

* চিকিৎসকদের দ্বারা ক্লিনিকাল অপব্যবহারের শিকার হওয়া: স্বাস্থ্যসেবা খাতের চিকিৎসকদের দ্বারা ক্লিনিকাল অপব্যবহারের কারণে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে। সিডিসির এক গবেষেণায় উঠে এসেছে, যে অ্যান্টিবায়োটিকের চিকিৎসায় দেখা যায় ব্যবহৃত এজেন্টের পছন্দ এবং থেরাপির সময়কাল ৫০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ভুল ছিল।

* সময়ের হেরফের করে ওষুধ খাওয়া: ওষুধ নিয়মমাফিক না খেয়ে সময় অসময়ে খেলে দেহের রোগ-জীবানু অ্যান্টিবায়োটিকের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।

* মহামারী চলাকালে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বৃদ্ধি করা: করোনা মহামারী চলাকালীন অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বৃদ্ধি এই বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হুমকি আরও বাড়িয়ে তুলছে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্যসেবা খাতে করোনা মহামারীকে বোঝা হিসাবে ধরা হচ্ছে। অন্যদিকে, কেউ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গেলে করোনার সংক্রমণে সে সহজে কাবু হয়ে যাবে।

* পরিবেশের দূষণ ঘটলে: ওষুধ কোম্পানির শিল্প কারখানা, হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের অপরিশোধিত বর্জ্য এবং অব্যবহৃত বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ যত্রতত্র ফেললে তা পরিবেশে সাথে মিশে জীবাণুগুলিকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের বিরুদ্ধে শক্তিশালী করে তোলে।

* খাদ্য দূষণ: অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের সংকট খাদ্যেও বিস্তৃত। বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদনকারী প্রাণীদের দেহ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হতে পারে। কেননা গবাদি পশুর দেহের বৃদ্ধির জন্য এবং রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা হ্রাস করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়। এর ফলে মানুষ সেই পশু খাবার হিসাবে খেলে তাতে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেন স্থানান্তরিত হয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

* ওষুধের কোর্স শেষ না করলে: আবার ওষুধের দামের কথা বিবেচনা করেও অনেকে পুরো ওষুধের কোর্স শেষ করেন না। ওষুধের পুরো কোর্স শেষ না করে অসমাপ্ত রাখলে দেহে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যানন্স তৈরী হতে পারে। কেউ কেউ ওষুধ খাবার পরে রোগ কিছুটা নিরাময় হলেই ওষুধ ছেড়ে দেয়। এমনটি করলে দেহ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে উঠতে পারে। কেউ কেউ লুজ মোশন বা পেট নরমের ভয়ে অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শেষ করেন না। এ কারণে আপনার দেহ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হতে পারে।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।