প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ জানিয়েছেন দেশের আরও ১৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় অষ্টম শ্রেণি চালু করার জন্য প্রস্তুত আছে এবং আগামী তিন বছরে আরও এক হাজার স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করার মতো অবকাঠামো আছে।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সচিবালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রদান ও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে সচিব এ তথ্য জানান।
আরো পড়ুন: ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের তারিখ ঘোষণা
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বলেন, ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে বলা আছে প্রাথমিক শিক্ষা হবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এটি পর্যায়ক্রমে হবে। এটি আসলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে সমন্বয়ের ব্যাপার। এখানে পলিসি মেকিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের সিদ্ধান্তে আমরা ৬৯৫ স্কুলে অষ্টম শ্রেণি চালু করেছি। আমরা সাতশ’র বেশি চালু করেছিলাম। একসময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার কারণে নতুন স্কুল অন্তর্ভুক্ত করিনি।
প্রাথমিক শিক্ষা সচিব জানান, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় সভায় ধারাবাহিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত এবং শতভাগ অবৈতনিক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, ৬৫ হাজার ৫৬৬ স্কুলের মধ্যে পাঁচ হাজারের কাছাকাছি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করতে পারি। মাধ্যমিকে ২৩ হাজারের কাছাকাছি, নিম্ন মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। এসব স্কুল যদি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক করতে পারে, তাহলে সরকারের এ সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, এটা করতে হলে তিন চ্যালেঞ্জ- অবকাঠামো, শিক্ষক নিয়োগ ও পদ সৃজন এবং তাদের প্রশিক্ষণ। কারণ আমরা আমাদের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেই পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। ‘আমরা মাঠপর্যায় থেকে যে তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি, তাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাইলে আমরা এই মুহূর্তে আরও ১৫৪ স্কুলে অষ্টম শ্রেণি চালু করতে পারি। পাশাপাশি আগামী তিন বছরে আরও এক হাজার স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করার মতো অবকাঠামো আছে। এটা একটি ধারাবাহিক এবং নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়া।’
কবে নাগাদ সব স্কুলে পুরোপুরি অষ্টম শ্রেণি চালু হবে হবে- জানতে চাইলে সচিব বলেন, এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এটার সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। অবকাঠামো, শিক্ষক নিয়োগ ও পদ সৃজন এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়গুলো আছে। এই কাজগুলো আমরা শুরু করেছি। আগামী তিন বছরের একটা টার্গেট নিয়ে কাজ করছি।
আরও পড়ুন: ১১ বছর পূর্ণ না হলে অষ্টম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন নয়
তিনি আরও বলেন, আমরা ‘স্মার্ট প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম-৫’ এর দিকে যাচ্ছি। সেখানেও বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি, যাতে অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধি, ষষ্ঠ-সপ্তম-অষ্টমের শিক্ষক-কর্মচারীর পদ সৃজন ও প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। আমাদের পিডিপি-৫ এর কাজ শুরু হলে এই কাজ আরও ত্বরান্বিত হবে।
ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘আমরা প্রবণতা দেখেছি, গেল ১০ কিংবা ২০ বছর ধরে যদি কোনো স্কুলে ১০-২০টি শিক্ষার্থী থাকে, আমরা সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে স্কুল একীভূত করবো না। যেমন, রাঙামাটি জেলায় একটি স্কুল আছে, যেটা ১০-২০ শিক্ষার্থী নিয়ে পনেরো বছর ধরে চলছে। কিন্তু আশপাশের সাত-আট কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্কুল নেই। যে কারণে ওই স্কুলটি একীভূত করা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবার কোনও কোনও জায়গায় রাস্তার এপাড়ে একটা স্কুল আছে, বিপরীত পাশের ৫০০ গজের মধ্যে আরেকটা স্কুল আছে। এসব স্কুলে ১০-১২ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে। আবার আধ কিলোমিটারের মধ্যে ২০০ জনের মতো ছাত্র-ছাত্রী আছে, এমন স্কুল আমরা একীভূত করে দেবো। এমন কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। স্থানীয় বাস্তবতা বিবেচনা করে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’