অলস পড়ে আছে প্রাথমিক উপবৃত্তির ১০০ কোটি টাকা

dpe-gov-shikkha

নিজস্ব প্রতিবেদক | ২০ জুন, ২০২০

প্রাথমিক স্তরের শিশুদের জন্য উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনায় সরকারের ১০০ কোটিরও বেশি পরিমাণ টাকা অলসভাবে পড়ে আছে কয়েকবছর ধরে। শুধু শিওর ক্যাশই না মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারাও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। কোনো প্রতিযোগীতা ছাড়া শুধু তদবির করে ১ কোটি ৩০ লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা বিতরণের দায়িত্ব পেয়ে আসছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিওরক্যাশ। রুপালী ব্যাংকের সাথে চুক্তি সই করে তারা রুপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

জানা যায়, প্রকৃত অভিভাবকের নামে টাকা বরাদ্দ করা হয়নি। বেশ কয়েক বছর ধরে জমে জমে ১০০ কোটি টাকার বেশি পরিমাণ অর্থ ভুতুরে অভিভাবকদের ওইসব অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। এই অভিভাবকরা প্রকৃত সুবিধাভোগী না এটা সবাই জানলেও চুপচাপ রয়েছেন। উপবৃত্তির সুবিধাভোগী অভিভাবকদের তালিকা মাঠ পর্যায়ে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা তৈরি করে থাকেন। সহায়তা করে শিওর ক্যাশ। পড়ে থাকা এই বিপুল অর্থ আগামী ২৫ জুনের মধ্যে অভিভাবকরা না তুলে নিলে তা সরকারি কোষাগারে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পে’র (তৃতীয় পর্যায়) আওতায় সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ূয়া এক কোটি ৩০ লাখ শিশুকে নিয়মিত উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। এক কোটি ২১ লাখ পরিবার এই সুবিধা পাচ্ছে। প্রতি তিন মাসে এক কিস্তি হিসেবে বছরে মোট চার কিস্তিতে উপবৃত্তির অর্থ সংশ্নিষ্ট শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মুঠোফোনে শিওর ক্যাশের মাধ্যমে পাঠানো হয়।

এ অবস্থায় ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্পে’র পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. ইউসুফ আলী ১৬ জুন সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে কড়া ভাষায় একটি চিঠি লিখেছেন। এতে তিনি বলেন, ‘স্বল্প সংখ্যক অভিভাবকের মোবাইল অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন কিস্তিতে উপবৃত্তির অর্থ পাঠানো হলেও তা অলসভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এসব অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো অর্থ তোলা হচ্ছে না। উল্লিখিত অ্যাকাউন্টগুলো প্রকৃত সুবিধাভোগী অভিভাবকদের নয় বলে প্রতীয়মান। আগামী ২৫ জুনের মধ্যে উত্তোলনের প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো। উল্লিখিত তারিখের পর অনুত্তোলিত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে। এরপর অভিভাবক কর্তৃক অনুত্তোলিত অর্থের আর কোনো দাবিনামা গ্রহণ করা হবে না।’

প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, শুধু গত বছরের জুন পর্যন্ত অনুত্তোলিত অর্থ ৫৭ কোটি টাকা। এ বছরের জুন পর্যন্ত মিলিয়ে তা ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত কেউ কেউ উপবৃত্তির টাকা তোলেননি। তাই তারা আসলেই প্রাথমিকের অভিভাবক কিনা, তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, প্রকৃত অভিভাবকরাই শুধু উপবৃত্তির টাকা পাবেন। যদি তালিকায় সুবিধাভোগীর বাইরে কেউ থেকে থাকে, তার দায় সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের নিতে হবে।

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।