জাল সনদ নিয়ে চাকরি করেন সহকারী শিক্ষিকা শামীমা সুলতানা ও জুলেখা আক্তার। তারা শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জাল করে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার শহীদ গিয়াস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।
গত ১৮ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের এমপিও বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তবুও তারা মে মাসের এমপিও বাবদ বেতন ও ঈদুল আজহার উৎসব ভাতা পেয়েছেন। সর্বশেষ জুন মাসের বেতনও পেয়েছেন এ দুই শিক্ষক। জুলাই মাসের শুরুতে জুন মাসের বেতন বাবদ এ দুই জাল শিক্ষক ১৯ হাজার ৯৮৬ টাকা করে তুলেছেন।
শুধু তারাই নন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চাকরিচ্যুতির নির্দেশ দেয়া ৬৭৮ জন জাল শিক্ষকের মধ্যে এমপিওভুক্ত ৪৭৯ জনের জুনের বেতন গত ৪ জুলাই ব্যাংকগুলোতে পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এর আগে জাল শিক্ষকদের ঈদুল আজহার উৎসব ভাতাও দেয়া হয়েছিলো।
তবে, জাল সনদধারী ওই ৪৭৯ জন শিক্ষকের বেতন স্থগিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে জাল শিক্ষকদের শোকজ করা হয়েছে, জুলাই মাসের এমপিও থেকে তাদের বেতন স্থগিত বা এমপিও স্টপ হবে।
গত ১৮ মে দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে কর্মরত জাল সনদধারী ৬৭৮ জন শিক্ষকে চাকরিচ্যুতির নির্দেশ দিয়েছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে বলা হয়েছিলো তাদের মধ্যে এমপিভুক্তদের বেতন বন্ধ করতে। ওই তালিকায় স্থান পাওয়া জাল শিক্ষকদের মধ্যে ৪৭৯ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক ছিলেন। বাকি ১৯৯ জন শিক্ষক ননএমপিও বা সরকারি অনুদানভুক্ত নন। জাল সনদধারীদের মধ্যে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জাল করে ৩২৩ জন, ১২৫ জন জাল কম্পিউটার সনদ নিয়ে ও ৩১ জন বিএড-বিপিএডসহ অন্যান্য সনদ জাল করে এমপিওভোগ করছেন। এমপিও বাবদ তাদের চাকরি জীবনে নেয়া টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
কিন্তু এরপর গত ১ জুন স্কুল-কলেজের মে মাসের এমপিওর চেক ছাড় হলে জানা যায়, ওই ৪৭৯ জাল শিক্ষক পেয়েছেন মে মাসের বেতন। গত ২১ জুন স্কুল-কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীদের ঈদুল আজহার উৎসব ভাতার চেক ছাড় হয়। ওই জাল ৪৭৯ জন শিক্ষক উৎসব ভাতাও পেয়েছেন। সর্বশেষ গত ৪ জুলাই ছাড় হয় জুন মাসের এমপিওর চেক। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিদপ্তর ওই জাল শিক্ষকদের জুন মাসের বেতনও ব্যাংকগুলোতে পাঠিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরও জাল শিক্ষকদের দুই মাসের বেতন ও উৎসব ভাতা দেয়াকে ‘জামাই আদর’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন সাধারণ শিক্ষকরা। সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতনের ৫ শতাংশ (সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা) বিশেষ সুবিধা দেয়ার ঘোষণা এসেছে। এর সঙ্গে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বাবদ আরো ৫ শতাংশ যুক্ত করে জুলাই মাসের এমপিওতে বেতন বাড়ছে শিক্ষকদের। জাল শিক্ষকরা জুনের বেতন পাওয়ার পর সাধারণ শিক্ষকদের শঙ্কা, ‘জামাই আদরের’ জাল শিক্ষকদের বর্ধিত বেতনও দেবে অধিদপ্তর। আগামী আগস্ট মাসের শুরুতে জুলাইয়ের এমপিওর চেক ছাড় হওয়ার কথা আছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, যখন জাল শিক্ষকদের তালিকা আমাদের কাছে এলো তখন খুবই কাজের চাপ ছিলো। পরে শুরু হলো ঈদের ছুটি। কাউকে শোকজ না করে তার এমপিও বা বেতন বন্ধ করা যায় না। তাই প্রক্রিয়াগত কাজ শেষ হতে হতে তাদের বেতন-ভাতা দেয়া হয়েছে। তবে, জাল শিক্ষকদের শোকজ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জুলাই মাসের এমপিও থেকে তাদের বেতন স্থগিত বা স্টপ এমপিও করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, জাল সনদধারী শিক্ষকরা যে টাকা এমপিও ও উৎসব ভাতা বাবদ নিয়েছেন তা তাদের ফেরত দিতে হবে। বেতন উৎসব-ভাতা বাবদ নতুন করে যে টাকা তাদের দেয়া হয়েছে সেগুলোসহ তাদের কাছ থেকে টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।