দেশের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুগোপযোগী ও অভিজ্ঞ মানবসম্পদ সৃষ্টি, পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটানোর সুযোগ রেখে ইন্টার্নশিপ নীতিমালা, ২০২৩ এর গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।
ইন্টার্নদের নির্দিষ্ট হারে ভাতা ও ছুটির সুযোগ রেখে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নীতিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত কিংবা অন্য কোনো প্রকার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইন্টার্নশিপ প্রদান করতে পারবে।
আরো পড়ুন: স্ববেতনে উপজেলা শিক্ষা অফিসার হলেন ৫০ জন
কার্যপরিধি হিসেবে বলা হয়েছে, এই নীতিমালা বাংলাদেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বাংলাদেশের নাগরিক এই ইন্টার্নশিপের আওতায় থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় বা সমমানের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরিচালিত ইন্টার্নশিপ এই নীতিমালার আওতাভুক্ত হবে না।
সামরিক বা বেসামরিক বা আধাসামরিক সকল প্রকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, সরকার কর্তৃক ঘোষিত কী পয়েন্ট ইন্সটলেশন (কেপিআই) স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কর্মে ইন্টার্নশিপ প্রদান করা যাবে না।
নীতিমালায় বলা হয়েছ, ইন্টার্ন বাছাই হবে মেধার ভিত্তিতে; বিষয় সংশ্লিষ্ট জ্ঞানের ভিত্তিতে (সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত); এবং আবেদনকারীর ইন্টার্নশিপের ক্ষেত্র বাছাইয়ের প্রেক্ষাপট এবং এক্ষেত্রে তার সম্ভাব্য অবদানের বর্ণনার ভিত্তিতে।
সুষম প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ইন্টার্ন বাছাই করতে হবে। এজন্য নীতিমালার আলোকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় তার ও তার অধীন দপ্তর, সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের অধিক্ষেত্র বিবেচনায় প্রত্যেক অর্থ বছরের জন্য ইন্টার্নশিপের সুযোগের সংখ্যা নির্ধারণ করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে ইন্টার্নশিপের স্থান, সংখ্যা, মেয়াদকাল, বিশেষ দক্ষতা, ভাতা (যদি থাকে), বাছাই প্রক্রিয়া প্রকৃতি বিষয় উল্লেখ করতে হবে।
ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ৩-৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি বাছাই কমিটি গঠন করবে। বাছাই কমিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রয়োজনের বিষয় বিবেচনা করে বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ইন্টার্ন বাছাই করবে। নারী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর আবেদনকারীদের এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, ইন্টার্নশিপের মেয়াদকাল সর্বনিম্ন তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত হতে পারবে, যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।
ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে আলাদা অর্থনৈতিক কোড সৃজন করবে। ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ অর্থ বিভাগের অনুমোদন বা বাজেট বরাদ্দ থাকা সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কোড থেকে ইন্টার্নশিপের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করবে।
নীতিমালা অনুসারে, ইন্টার্ন প্রতিমাসে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ ভাতা প্রাপ্য হবেন। ভাতা ছাড়া ইন্টার্ন অন্য কোনো ভাতা বা সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। ভাতা প্রাপ্তির প্রাক্কালে প্রতিমাসে ইন্টার্নকে তার সন্তোষজনক কর্মকালের বিষয়ে সুপারভাইজারের নিকট থেকে প্রত্যয়ন সংগ্রহ করতে হবে।
ইন্টার্নশিপে যোগদানের সময় অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তার মৌলিক যোগ্যতা ও অন্যান্য গুণাবলির বর্ণনা সংবলিত প্রত্যয়ন; স্নাতক/স্নাতকোত্তর/সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সনদ, অথবা উক্তরূপ পরীক্ষাসমূহে অবতীর্ণ হওয়ার প্রত্যয়ন (যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক) পত্রের কপি; জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং অন্য কোনো কর্মে নিয়োজিত থাকলে প্রয়োজনীয় অনাপত্তি সনদ দিতে হবে।
নীতিমালায় ইন্টার্নশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কার্যাবলি হিসেবে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ ইন্টার্নশিপের চাহিদা বা যৌক্তিকতা নিরূপণ; ইন্টার্নের কর্মের সুনির্দিষ্ট শর্তাবলি নির্ধারণ; ইন্টার্নশিপের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ, বাজেট নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন গ্রহণ ও বাছাই কমিটি গঠন; বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে ইন্টার্ন মনোনয়ন করবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, সুপারভাইজার দাপ্তরিক কার্যক্রমের সঙ্গে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামকে সমন্বয় করে ইন্টার্নকে বিভিন্ন দায়িত্ব/কার্যাবলি দেবেন। পাশাপাশি ইন্টার্নদের সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং কাজের মূল্যায়ন করা; আচরণ ও কাজের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সময়ে সময়ে ইন্টার্নের সঙ্গে আলোচনা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবেন।