নিজস্ব প্রতিবেদক: অঙ্গ সংযোজনের ক্ষেত্রে অনিয়ম হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রেখে মানবদেহে অঙ্গ-প্রতঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন- ২০১৭ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এর আগে এ আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল সাত বছরের কারাদণ্ড এবং তিন লাখ টাকা জরিমানা। সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সোমবারের বৈঠকে এ আইনের অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদের অতিরিক্ত সচিব আশরাফ শামীম সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, খসড়া আইনে অঙ্গ-প্রতঙ্গ বলতে কিডনি, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, অগ্নাশয়, অস্থি, চক্ষু, অন্ত্র, যকৃত-কে বুঝাবে। এসব সংযোজন বা বিয়োজনের ক্ষেত্রে অনুমোদিত হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞদের একটি মেডিকেল বোর্ড থাকবে এবং সরকারের অনুমতি নিতে হবে।
আশরাফ শামীম বলেন, কোনো হাসপাতাল সরকারের অনুমতি ছাড়া মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করতে পারবে না। তবে সরকারি হাসপাতালে যেখানে বিশেষায়িত ইউনিট আছে সেখানে এ ধরনের অনুমতির প্রয়োজন নেই। যাদের অনুমতি নেই তারা এ আইন কার্যকর হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে অনুমতির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে পারবে বলেও জানান তিনি।
সংশোধিত আইনে নিকটাত্মীয়দের সংজ্ঞাও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নিকট আত্মীয়ের মধ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করা যাবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদের অতিরিক্ত সচিব বলেন, আইনে নিকট আত্মীয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী ও রক্তের সম্পর্কের আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা, নানা-নানী, দাদা-দাদী, নাতি-নাতনী এবং আপন চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাই বা বোন।
তিনি বলেন, আগের আইনে নিকট আত্মীয় বলতে পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও রক্তের সম্পর্কের আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা ও স্বামী-স্ত্রীকে বুঝানো হয়েছিল। নতুন আইনে নিকট আত্মীয়ের সংজ্ঞা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তবে চোখ ও অস্থিমজ্জা সংযোজনের ক্ষেত্রে নিকট আত্মীয় হওয়ার আবশ্যকতা নেই বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব।
তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি নিকট আত্মীয় সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিলে অথবা উক্ত তথ্য প্রদানে উৎসাহীত, প্ররোচিত বা ভীতি প্রদর্শন করলে উহা হবে একটি অপরাধ এবং অপরাধী অনধিক দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
নিকট আত্মীয় ছাড়া অন্য যে কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে অথবা লঙ্ঘনে সহায়তা করলে উহা হবে একটি অপরাধ এবং এর জন্য অপরাধী অনধিক তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এ আইনের অধীনে কোনো অপরাধের জন্য কোনো চিকিৎসক দণ্ডিত হলে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক প্রদত্ত রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে। হাসপাতল কর্তৃক এ আইনের কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে উক্ত হাসপাতালের মালিক, পরিচালক, ব্যবস্থাপক- যে নামেই পরিচিত হোক না কেন তিনি অপরাধী বলে গণ্য হবেন। তবে তিনি যদি প্রমাণ করতে পারেন যে উক্ত অপরাধ তার অজ্ঞাতসারে সংঘটিত হয়েছে এবং উহা রোধ করার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন তাহলে তিনি অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন না।
কোনো হাসপাতাল কর্তৃক এ আইনের কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে উক্ত হাসপাতালের মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অনুমোতি বাতিল হবে এবং উক্ত হাসপাতালে মালিককে অর্থ ও কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
তিনি বলেন, আগের আইনে ঢালাওভাবে বলা ছিল, এ আইনের আলোকে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীর সর্বনিম্ন তিন বছর বা সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
২০১১ সালে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনার আলোকে মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯ নামে বর্তমান আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনেরর ক্ষেত্রে অবৈধ ব্যবসা ও পাচার বন্ধে এ আইন সংশোধন করা হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব।