নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা: পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় শুধু মন্ত্রণালয়ের উপর চাপানো সঙ্গত নয় বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
বুধবার চাঁদপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, বিশ বছর আগে যে লেখাপড়া হতো এখন তা হয় না। এ দায় কার? এ দায় শুধু শিক্ষা অফিসারক দিলে তো হবে না। এ দায় অভিভাবকদের, ছাত্রের।
তিনি বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস; এ দায় কি শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের? ইউ নিড টু আন্ডারস্ট্যান্ড যে কী করতে হবে। আসলে আমরা যাচ্ছি কোথায়? আমরা কি নদীর ভিতরে পড়ছি, নাকি নৌকায় উঠছি?’
চলমান এসএসসির যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে গেছে সবগুলোর প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংসদে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করা হয়। তারপরও প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হচ্ছে না।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে আপনাকে পারটিকুলার কথাটা বলতে হবে। এত বক্তৃতা দিয়ে কোনো লাভ নেই। অনেক বক্তৃতা এদেশে হয়ে গেছে। নাও টাইম হ্যাজ কাম ফর একশনস।আপনি কি মনে করেন না যে আমার বাচ্চারা শেষ হয়ে যাচ্ছে! আমাদের বাচ্চাদের কোনো লেখাপড়া হচ্ছে না! যত কথাই আপনারা বলেন না কেন সত্যকে সত্য বলতে হবে।’
এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি জনপ্রতিনিধিদের আহ্বান জানান।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে দুদকের মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডলসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ প্রশ্ন ফাঁস বন্ধের সঠিক সমাধান নয়: জাফর ইকবাল
ইন্টারনেট বন্ধ করে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ঔপন্যাসিক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। প্রশ্নফাঁস রোধে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগও কোনো সঠিক সমাধান নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সিলেটের মিরের ময়দানে বিশ্ব বেতার দিবস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন জনপ্রিয় এ লেখক।
জাফর ইকবাল বলেন, ‘প্রথমত যদি প্রশ্নফাঁস হয়, তো লেখাপড়া শেষ। প্রশ্নফাঁস যদি হয়, যতই আপনি চেষ্টা করেন, লেখাপড়ার কোনো গুরুত্ব নাই। যেই ছেলেটা এসএসসিতে একটা ভালো করেছে, আমি তো জানি না সে আসলেই ভালো করেছে নাকি প্রশ্নফাঁসের জন্য ভালো করেছে। কিংবা যে ছেলেটা ভালো করে নাই, কেননা প্রশ্নফাঁস দেখে নাই। তাই না? তাঁকে তো আমি ক্ষতিগ্রস্ত করছি। কাজেই মোটামুটিভাবে বলা যায়, প্রশ্নফাঁস যদি চলতে থাকে তাহলে আমাদের দেশের শিক্ষার কোনো গুরুত্ব নাই। আমি বলতে পারবো না যে, শিক্ষা হচ্ছে। কাজেই সরকারকে এটা বন্ধ করতেই হবে।’
শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ কোনো সমাধান নয় বলেও মন্তব্য করেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেন,‘এখন এটা হাস্যকর পর্যায়ে চলে গিয়েছে। জাতীয় সংসদে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং সেখানে সাংসদরা বলেছেন যে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এবং শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছেন পদত্যাগ করার জন্য। এটা এই পর্যায়ে গিয়েছে। স্বীকার করছেন না বললে এখন আর হবে না। অবশ্যই পদত্যাগ সমাধান না। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের সমস্যাটাকে সিন্সিয়ারলি অ্যাড্রেস করাটা, এটা সমাধান। আমি তো প্রথম দিন থেকে বলে আসছি যে, আপনারা ঘোষণা দেন, যে যা হবার হয়েছে ভবিষ্যতে আর প্রশ্নফাঁস হবে না। কিন্তু উনারা সেই ঘোষণা দেন না। কারণ উনাদের সেই কনফিডেন্সটা নাই, বলবেন যে প্রশ্নফাঁস হবে না। আমি যদি ঘোষণা দেই যে, প্রশফাঁস হবে না তাহলে আমাকে কিন্তু যেভাবেই হোক প্রশ্নফাঁস বন্ধ করতে হবে।’
প্রশ্নফাঁসের মূল কারণ উদঘাটন করে এর সমাধান করাটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলে জানান মুহম্মদ জাফর ইকবাল। প্রয়োজনে বিজি প্রেসে প্রশ্ন না ছাপিয়ে বিকল্প উপায়ে প্রশ্ন ছাপানোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
জাফর ইকবাল বলেন,‘যখন নাকি ছাপানো হবে প্রশ্নটাকে তখনই এটা সেলফ সিকিউরড থাকতে হবে। যেন কোনোভাবে কারো হাতে না যেতে পারে। ইন্টারনেট বন্ধ করে এটা বন্ধ করা যাবে না। প্রশ্ন ফাঁসটা বন্ধ করতে হবে। প্রব্লেমটাকে অ্যাড্রেস করতে হইলে প্রথমত প্রব্লেমটাকে বুঝতে হবে। এ থেকে জেড পর্যন্ত প্রতিটা স্টেপ আমাকে জানতে হবে। ঠিক করে জানতে হবে, কোথায় এটা ফাঁস হয়েছে, কেন হয়েছে। তাঁর চেয়ে বড় কথা যারা এটা করছে তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে।’
এর আগেও প্রশ্নফাঁসের কথা বললেও কেউ স্বীকার করেননি বলে জানান মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, ‘আমি বহুদিন আগে এই প্রশ্নফাস নিয়ে শহীদ মিনার পর্যন্ত বসে ছিলাম, বৃষ্টির ভেতরে। কেউ আমার কথা শুনে নাই। অলরাইট? শিক্ষা মন্ত্রণালয় কখনো স্বীকার করে নাই যে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এখন এটা শুরু হয়েছে, ফর দ্যা ফার্স্ট টাইম ওরা বলছে, যে হ্যা প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ করছেন, এটা বন্ধ করছেন, সেটা বন্ধ করছেন। মানে চেষ্টা করতেছেন। কিন্তু আমার মনে হয় যে, এটা প্রশ্নটাকে ঠিকভাবে এপ্রোচ করা হয় নাই। উনাদের এপ্রোচটা হচ্ছে যে, প্রশ্নফাঁস হবেই, আমরা শুধুমাত্র যেন ডিস্ট্রিবিউশনটা না করতে পারি সেটা দেখাইতে হবে। বুঝেছেন তো, ডিস্ট্রিবিউশনটা যাতে না করতে পারে। প্রশ্নফাঁস হবেই উনারা ধরে নিয়েছেন। কেন প্রশ্নফাস হবে, এটা আমি মানতে রাজি না।’
লেখক আরো বলেন, ‘আমি কালকে একটা ই-মেইল পেয়েছি, যেখানে একজন বলেছে, যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ছেলে সারাদিন ধরে বোর্ড অফিসে থেকেছে, সেখান থেকে প্রশ্ন বের করে নিয়ে আসছে। আমি সত্য মিথ্যা জানি না। কিন্তু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে আমি যদি বোর্ডে বসে থাকি সারাদিন ঐখান থেকে একটা প্রশ্নপত্র কেউ না কেউ আমাকে দিয়ে দেবে। আসলেই এটা হয়েছে কিনা জানি না। কিন্তু মানুষজন কেন এটা চিন্তা করবে বোর্ডে গেলে একটা প্রশ্নপত্র পেয়ে যাব?’