৫ হাজার জাল সার্টিফিকেট ভুয়া লোকদের হাতে

Image

এ কে এম শামসুজ্জামান। গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে। চাকরি করেন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে। ২০০৯ সালে কাজে যোগদান করেন তিনি। পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট হন। এই পদে দায়িত্ব পালন করার কারণে দেশের ৬৪ জেলার হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য থাকতো তার হাতে।

এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শামসুজ্জামান তার এক কম্পিউটার অপারেটরকে সাথে নিয়ে গড়ে তোলেন সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বাণিজ্য।

মূলত চাকরির চেয়ে শামসুজ্জামানের কাছে সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরি করে বিভিন্ন জনের কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রিই মুখ্য হয়ে উঠেছিল। ফলে তিনি যতোটা না চাকরি করতেন তার চেয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন এসব কাজে।

গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের অধিক ‘অরিজিনাল’ সার্টিফিকেট মার্কশিট বানিয়ে ভুয়া লোকদের কাছে বিক্রি করেছেন তিনি। একই সাথে সরকারি ওয়েবসাইটে, সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের কাছে বিক্রিত সার্টিফিকেটগুলোর তথ্যও বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছেন। যার ফলে পড়াশুনা না করে ওইসব ভুয়া ব্যক্তির হাতে চলে গেছে আসল সার্টিফিকেট।

সোমবার (১ এপ্রিল) ভোর থেকে রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগ ও আগারগাঁও এলাকায় নকল সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরির কারখানায় অভিযান চালায় ডিবি। এ সময় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামান ও তার সহযোগী ফয়সাল হোসেন। তাদের গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে।

আরও পড়ুন: জাল সার্টিফিকেট তৈরি: কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট বরখাস্ত

ডিবির লালবাগ বিভাগের ডিসি (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মশিউর রহমান ঢাকা মেইলকে জানান, শামসুজ্জামান অফিসের কিছু লোক এবং বাইরের বিভিন্ন বিভাগের কিছু দালালকে দিয়ে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট তৈরির এই বাণিজ্য করতেন। দালালরা কখনো কখনো ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মাধ্যমে বিজ্ঞাপনও দিতো তারা যে অরজিনাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট দিবে তা অনলাইনে ভেরিফাইড হবে।

তিনি আরও জানান, ২০১৭ সালেও মার্কশিট সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টের মাধ্যমে আবার চাকরিতে পুনর্বাহল হন তিনি। শামসুজ্জামান এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পাঁচ হাজারের অধিক সার্টিফিকেট মার্কশিট বিক্রি করেছেন। যা তিনি ডিবির কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, দেশের ৬৪ জেলার বিভিন্ন থানার আনাচে কানাচে অবস্থিত কারিগরি বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করা হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন, রোল নাম্বার, সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি, সেগুলোকে নির্দিষ্ট সার্ভারে আপলোড দেওয়া, ভেরিফিকেশন নিশ্চিত করা, কম্পিউটার সিস্টেম কোড সংরক্ষণ গোপনীয়তা বজায় রাখাসহ বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সকল প্রকার ডিজিটালাইজেশন এবং কম্পিউটারাইজেশন মূল দায়িত্ব ছিল শামসুজ্জামানের হাতে। সহকর্মী কম্পিউটার অপারেটর বা এক্সপার্টদের সাথে নিয়ে এই দায়িত্বটা তিনি পালন করবেন এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু তিনি তার অফিসিয়াল দায়িত্ব পালনের চেয়ে দুর্নীতিমূলক কাজ করার জন্যই বেশি আগ্রহী ছিলেন। এ বিশাল তথ্য ভান্ডার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অথরিটি, সিস্টেম কোড ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রতি সপ্তাহ প্রতিমাস এবং বছরে শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগীরা লাখ লাখ টাকার সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বাণিজ্য করেছেন তিনি।

ডিবি মনে করছে, একজন ব্যক্তির পক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে এতো বড় জোচ্চুরি করাটা দুষ্কর। তার সাথে অন্যরাও জড়ি ও তারাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন। আর তা না হলে তারা দায়িত্বে অবহেলা করে তাকে এই কুকর্মটি সম্পাদন করার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তবে এই ঘটনায় যারাই জড়িত থাক না কেন তদন্ত করে জড়িত সকলকেই আইন আওতায় আনবে ডিবি। এ নিয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।