বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত শেষ করতে কাজ করছে পিএসসি। এর জন্য রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে গতি আনতেও কাজ করছে সংস্থাটি। পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানালেন। এ ছাড়া আরও নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোছাব্বের হোসেন
প্রথম আলো: বিসিএস পরীক্ষা গ্রহণে সময় লাগছে বেশি। সময় কমিয়ে আনার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
মোহাম্মদ সাদিক: বিসিএস পরীক্ষার একটি কাঠামো আছে। আমি চাইলে এটি বদলাতে পারব না। এখন আমরা একসঙ্গে তিন-চারটি পরীক্ষা নিয়ে কাজ করছি। ৩৫তম বিসিএসের নন ক্যাডারদের রেজাল্ট দিচ্ছি। ৩৬তম-এর ফলাফল তৈরি করছি। ৩৭তম-এর মৌখিকের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, ৩৮তম-এর আবেদন ফরম গ্রহণ করছি। চারটি পরীক্ষা যদি চার বছরের মধ্যে শেষ করি, তাও এক বছর সময় লাগছে। একটা বিসিএস পরীক্ষা মানে শুধু একটা পরীক্ষা নয়। ২৭টি ক্যাডারের পরীক্ষা। এর মধ্যে সাব ক্যাডার আছে। শুধু শিক্ষা ক্যাডারেই ৭৯ রকমের বিষয় আছে। এই ৭৯ রকমের প্রশ্ন করা, বিশেষজ্ঞ আনা, খাতাও দেখাতে হয় ৭৯ রকমের শিক্ষককে। এই বিপুল কর্মযজ্ঞে তাই সময় লাগে। দেড় বছরের বেশি সময় লাগছে। আমরা রোডম্যাপ করেছি। যদি দেড় বছরের মধ্যেও শেষ করতে পারি, সেটাও অনেক ভালো। আরও দ্রুত করতে হলে কাঠামোগত কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। সেটি নিয়ে কাজ করছি।
প্রথম আলো: চলমান বিসিএস পরীক্ষাগুলো কোনটির কী অবস্থা?
মোহাম্মদ সাদিক: আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে ৩৬তম বিসিএসের রেজাল্ট দিয়ে দেব। এটি এর আগেও হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ৩৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে নিতে পারব। ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অক্টোবরের মধ্যে নিতে পারব বলে আশা করছি।
প্রথম আলো: ৩৫তম বিসিএসের নন ক্যাডারদের নিয়োগের কী অবস্থা?
মোহাম্মদ সাদিক: ৩৫তম বিসিএসের নন ক্যাডারদের জন্য একটি সুখবর আছে। আমি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে তাদের চাহিদা জানানোর জন্য আধা সরকারি পত্রের মাধ্যমে অনুরোধ করেছি। অনেক শূন্য পদের তালিকা নিয়ে এসেছি। তারা শূন্য পদের যে তালিকা দিয়েছে, যেসব পদের যোগ্যতার সঙ্গে প্রার্থীদের যোগ্যতার সামঞ্জস্য আছে তারা প্রায় সবাই নিয়োগ পাবেন। এই পদগুলোতে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ করতে হয়তো দুই আড়াই বছর লেগে যেত। যেটা আমরা কমিয়ে এনেছি।
প্রথম আলো: ভবিষ্যতে বিসিএস পরীক্ষায় কোনো পরিবর্তন আসছে কি না?
মোহাম্মদ সাদিক: বিসিএসে কীভাবে আরও সংস্কার আনা যায়, সে জন্য আমাদের একটি কমিটি কাজ করছে। সে কমিটিতে একাধিক কমিশন সদস্য আছেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ক্যাডার এবং নন ক্যাডার কর্মকর্তারা আছেন। এর সুপারিশ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এখনো সেই সুপারিশ কমিশন সভায় নিয়ে আসতে পারিনি। সেগুলো এনে সুপারিশগুলো গ্রহণ করা হবে। পরীক্ষার নম্বর বাড়বে না কমবে—এটা আগে থেকে বলা যাবে না।
প্রথম আলো: নন ক্যাডারের মেধাতালিকা কীভাবে করেন? এটা প্রকাশ করা হয় না কেন?
মোহাম্মদ সাদিক: মেধাভিত্তিক তালিকা আমাদের কাছে আছে। ধরুন মেধাতালিকায় কেউ এগিয়ে আছে কিন্তু আমাদের কাছে শূন্যপদের যে শিক্ষাগত যোগ্যতা চেয়েছে, সেটি মেধাতালিকায় থাকা প্রার্থীর নেই। যেমন আমার কাছে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার চাহিদা আছে। সেখানে চাওয়া হয়েছে হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্স। কিন্তু মেধাতালিকায় থাকা প্রার্থী রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স। তাহলে তো তিনি মেধাতালিকায় থাকার পরও বিষয়গত দিক থেকে যোগ্য নন। এ রকম সূক্ষ্ম অনেক জটিলতার কারণে মেধাতালিকা প্রকাশ সম্ভব হয় না। মুশকিল হচ্ছে, আমি যদি আগে মেধাতালিকা দিয়ে দিই, আর সেই প্রার্থীকে চাকরি দিতে না পারি, তাহলে তো তালিকা প্রকাশ করে কোনো লাভ হয় না।
প্রথম আলো: কোটাপদ্ধতি সংস্কারের চিন্তাভাবনা আছে?
মোহাম্মদ সাদিক: কোটাপদ্ধতি সংস্কারের বিষয়টি কখনই পিএসসির না। এটা সম্পূর্ণ সরকারের বিষয় এবং এটি সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটা করা হয়। আমরা কোটানীতিকে শুধু অনুসরণ করি।