গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে চার ছাত্রী চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এর মধ্যে তিনজন ছাত্রীই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। অন্য এক ছাত্রী দীর্ঘ দুই মাস চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল শনিবার দুপুর থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত এই চার শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
আত্মহত্যায় নিহত তিন শিক্ষার্থী হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আদ্রিতা বিনতে মোশারফ (২১), নাটোর এনএস সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান মারিয়া বৈশাখী (১৮), যশোরের মনিরামপুরের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সাবিহা (১৯)।
আরো পড়ুন: দরজা ভেঙে কলেজছাত্রী বৈশাখীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা আহত হয়ে ২ মাস ৭দিন চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের (২০১৯-২০) ছাত্রী সানজিদা অর্নি (২২)। শনিবার (৩০ মার্চ) রাত ৯ টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
গত ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডির ২৭ নম্বর এলাকায় সানজিদা অর্নিকে বহনকারী রিকশা একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তাৎক্ষণিক তিনি রিকশা থেকে পড়ে গেলে ওই ট্রাকটি সানজিদার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। পরে পথচারীরা ওকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এদিকে রোববার (৩১ মার্চ) ভোরে রাজধানীর দক্ষিণ ফুলার রোডে ঢাবির আবাসিক কোয়ার্টারের ১৯ নম্বর ভবনের তৃতীয় তলা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আদ্রিতা বিনতে মোশারফের (২১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আদ্রিতার বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম থানার মজলিশপুর গ্রামে। তার বাবা অধ্যাপক ড. মোশারফ হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক। বাবা-মায়ের সঙ্গেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে থাকতেন তিনি।
জানা যায়, রাত সাড়ে চারটার দিকে সেহরি খেতে আদ্রিতার বাবা অধ্যাপক মোশারফ হোসেন তার কক্ষের সামনে গিয়ে ডাকছিলেন। কিন্তু তার কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে তিনি কক্ষে প্রবেশ করেন। পরে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তিনি।
এর আগে শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে ও রাতে আত্মহত্যা করেন দুই ছাত্রী। এর মধ্যে নাটোর শহরের একটি ছাত্রীনিবাস থেকে নাটোর এনএস সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান মারিয়া বৈশাখীর (১৮) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
শনিবার (৩০ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের উত্তর বরগাছা জোলারবাতা এলাকার হাফসা ছাত্রীনিবাস থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সে জেলা ব্যাডমিন্টন দলের খেলোয়াড় ছিল বলেও জানা গেছে।
জানা যায়, শনিবার রাত ৯টার দিকে ছাত্রীনিবাসের তৃতীয় তলার ছাত্রীরা বৈশাখীর রুমের দরজা বন্ধ দেখে তাকে ডাকলেও কোন সাড়া পায় নি। এরপর তার পরিবার ও পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে বৈশাখীর রুমের দরজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে।
এছাড়া যশোরের মনিরামপুরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সাবিহা। পরীক্ষায় নকলের অভিযোগ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চান তিনি। কিন্তু ক্ষমা না পেয়ে পরীক্ষার হল থেকে বাড়িতে এসে আত্মহত্যা করেন এই কলেজছাত্রী। আত্মহত্যার আগে একটি চিরকুট লিখে যান সাবিহা। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ক্ষমা চাওয়ার পরও দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা তার খাতা ফেরত দেননি দায়িত্বে থাকা শিক্ষক, তাই লজ্জায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে মনিরামপুরের বাগডাঙ্গা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। সাবিহা ওই দিন সকালে গ্রামের বাড়ি বাগডাঙ্গা থেকে গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় অংশ নেয়।