২২০০ আসনের মধ্যে কোচিং থেকে চান্স পেয়েছে ২৫০০!

শিক্ষাবার্তা ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যার চেয়ে কোচিং সেন্টার থেকে চান্সপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশী! এই অসাধ্যকে সাধন করেছে রাজধানীর পাঁচ কোচিং সেন্টার। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই মেধাক্রমে চান্স পাওয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেছে তিন-চারটি সেন্টারে। এমনই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরিচালিত বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টারের প্রসপেক্টাসে। আর এসব ফোলানো-ফাঁপানো তথ্যে মন্ত্রমুগ্ধ হয়েই কোচিং সেন্টারগুলোতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদে (খ ইউনিট) আসন সংখ্যা ছিল ২২২১। এই আসন সংখ্যার বিপরীতে ইউসিসি, ইউনিএইড(কবির-সুমন), ইউনিএইড(মনির-মল্লিক), আইকন ও আইকন প্লাস থেকে চান্সপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫৬৪ জন। যাদের মধ্যে ইউসিসি’র শিক্ষার্থী ৮৫৬, ইউনিএইড’র (কবির-সুমন) ১০৪২, ইউনিএইড’র (মনির-মল্লিক) ২৬৬, আইকন ৩১০ ও আইকন প্লাস ৯০ জনের বেশি। এছাড়া এই পাঁচ কোচিং থেকে বাণিজ্য অনুষদের (গ ইউনিট) ১১৭০টি আসনের বিপরীতে চান্স পেয়েছন ১৭৪৪ জন। কোচিং সেন্টারগুলো তাদের প্রসপেক্টাসে আবার এসব শিক্ষার্থী তাদের প্রতিষ্ঠানেই কোচিং করেছেন দাবি করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

কোচিং সেন্টারের বাণিজ্য নিয়ে প্রতিবছর শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা নানামুখি পদক্ষেপের কথা বললেও এসব প্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম্য বন্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপই নেননি। এর ফলে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পকেট কেটে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। সচেতন অভিভাবকেরা এসব ধান্দাবাজির অপব্যবসা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

UCC_BG1গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদে মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রথম বিশজনের মধ্যে আটজনই তাদের কাছে পাঠ নিয়েছে বলে দাবি করছে একাধিক কোচিং সেন্টার। এর মধ্যে ষষ্ঠ, সপ্তম ও সতেরতম স্থান লাভ করা শিক্ষার্থীদের নাম, ছবি ও কলেজের নাম দিয়ে নিজেদের শিক্ষার্থী বলে দাবি করেছে আইকন, ইউসিসি ও ইউনিএইড। আর খ ইউনিটে সেরা বিশের চার শিক্ষার্থী এসব কোচিং সেন্টারের আইকন প্লাস ছাড়া সবক’টিতেই পাঠ নিয়েছে বলে তাদের দাবি।

তবে শুধু এসব কোচিং সেন্টারে পাঠগ্রহণ করলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয় না! প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে আলাদাভাবে পড়তে হয় এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রাইভেট ব্যাচে। একেকজন বিশেষজ্ঞ! পড়ান আলাদা আলাদা বিষয়। এদের পেছনে শিক্ষার্থীদের প্রতিমাসে দিতে হয় আরো চার-পাঁচ হাজার টাকা করে।

গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মেহেদী হাসান নামে এক শিক্ষার্থী জানান, কোচিংয়ে যেসব ভাইয়ারা পড়ান তাদের কাছে আলাদাভাবে না পড়লে কোচিং ক্লাসে বকাঝকা করেন। তাছাড়া এনারা পরিক্ষার্থীদের কাছে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস/জোগাড় করে দেওয়াসহ নানাভাবে সহায়তা করেন।

ইউসিসিতে ইংরেজি পড়ান ‘আলী স্যার’ নামে পরিচিত একজন। সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে তাকে ফোন করা হলে ব্যাচে শিক্ষার্থী নেওয়া শুরু হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তুমি কোন কলেজে পড়? কাল সকাল এগারটার মধ্যে কোচিংয়ে চলে আসো। এসে আমাকে একটা ফোন দাও।’ পরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি রং নাম্বার বলে ফোন রেখে দেন।

প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের এমন নানা প্রচারের ফাঁদে কোচিং করতে আকৃষ্ট করছে এসব প্রতিষ্ঠান। আর নানা কায়দায় হাতিয়ে নিচ্ছে শত শত কোটি টাকা। উপরে হাতিয়ে নিচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।