১১তম গ্রেড নিয়ে চলমান ক্ষোভের মধ্যেই নতুন সিদ্ধান্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের

ডেস্ক,৯ মে ২০১৯:

১১তম গ্রেড নিয়ে চলমান ক্ষোভের মধ্যেই নতুন সিদ্ধান্ত এসেছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের জন্য। এখন থেকে সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষককে প্রতিদিন নির্ধারিত ৭ ঘণ্টা ১৫ মিনিট বিদ্যালয়ে অবস্থান করতে হবে। বুধবার প্রাথমিক শিক্ষার ঢাকা বিভাগীয় উপ পরিচালক ইন্দু ভূষণ দেব স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

শিক্ষকরা বলছেন, তারা যখন বিদ্যালয়ের কর্মঘন্ট কমানোর দাবি তুলছেন, তখন এ ধরণের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অযৌক্তিক। এটি সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, সরকারি প্রাথ‌মিক বিদ্যালয়গুলোতে সকাল ৯ টা থেকে দীর্ঘ সময় শিশুদের বিদ্যালয়ে অবস্থান করতে হয়। মাঝখানে মাত্র ৩০ মি‌নিট বিরতি থাকলেও কোনো বিদ্যালয়ে শিফট থাকলে শিক্ষকদের থাকা আবশ্যক হয়। এতো দীর্ঘ সময় ধরা-বাঁধা নিয়মের মধ্যে থেকে কীভাবে শিশুদের দৈহিক বা মান‌সিক বিকাশ ঘটতে পারে?


সরকারের ওই পরিত্রে বলা হয়, মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে নির্ধারিত সময়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শিক্ষক-শিক্ষিকাগণকে সুশৃঙ্খল হওয়া প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সূচি অনুযায়ী শিক্ষকগণ দৈনিক ৭ ঘন্টা ১৫ মিনিট বিদ্যালয়ে অবস্থান করবেন। এছাড়াও বিজ্ঞপ্তিতে আরো কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা হলো- শিক্ষকদের নির্ধারিত সময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি; শ্রেণিপাঠদান শেষ হলে বাকি সময়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকার্যক্রম কিংবা বাড়ির কাজ মূল্যায়ণ এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত বিদ্যালয় ত্যাগ করলে বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা।

সামগ্রিক বিষয় মনিটরিংয়ে সহকারী ইনস্ট্রাক্টর, সহকারী থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তা, সুপারিনটেনন্টে অথবা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাগণকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এদিকে এমন পরিপত্রের সমালোচনা করে ক্ষোভে ফুঁসছেন প্রাথমিক শিক্ষকদের অনেকে। তারা বলছেন, ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত করে তাদের উপর নতুন নতুন সিদ্ধান্ত চাপানো হচ্ছে। এটা অযৌক্তিক। ফেসবুকে নজরুল ইসলাম এক শিক্ষক লিখেন, ‘মানসম্মত শিক্ষা চাইলে মানসম্মত গ্রেড দিতে হবে। বিশেষ করে প্রাথমিকের কাজের উপর গ্রেড নির্ধারণ করা হোক। শিক্ষক মানেই শ্রেণি পাঠদান। ক্লাস রুটিনে যদি সহকারীর কর্ম ঘন্টা বেশি হয়; তবে ১০ম গ্রেড দিন…। এক শিক্ষক লিখেছেন, শ্রমিকের মতো আমাদের কর্মঘন্টা নির্ধারণ করে; এটা খুবই দুঃখজনক। মিয়া আব্দুল কাদের বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের দেখার তো কেউ নেই।

কবি ও গবেষক হাসান হামিদ বলছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্তই যথেষ্ট। যেহেতু বেশির ভাগ শিক্ষক নারী; তাই তাদের সন্তানদের সময় দেয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে ভাবা উচিত। আর প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি সকাল ৯টা থেকে ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত করলেই হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, সরকারি প্রাথ‌মিক বিদ্যালয়গুলোতে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪টা ১৫মিনিট পর্যন্ত (৭ঘন্টা) সময় শিশুদের বিদ্যালয়ে অবস্থান করতে হয়। মাঝখানে বিরতি মাত্র ৩০ মি‌নিট। (এর মধ্যে কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিফট থাকলেও শিক্ষকদের থাকা আবশ্যক) এতো দীর্ঘ সময় ধরা-বাঁধা নিয়মের মধ্যে থেকে কীভাবে শিশুদের দৈহিক বা মান‌সিক বিকাশ ঘটতে পা‌রে?

এর আগে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি সিরডাপ মিলনায়তনে একটি বেসরকারি সংস্থার অনুষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সময়সূচি কমিয়ে আনার কথা বলেছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তিনি সেদিন বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে বাচ্চারা স্কুলে থাকতে চায় না। তেমনি শিক্ষকদের মানসিকতাও ঠিক রাখা কঠিন। তাই বিষয়টির দিকে নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

চলতি মাসের ৫মে চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরুল স্কুল মাঠে সময় কমানোর কথা বলেন অত্র দপ্তরের সচিব আকরাম আল হোসেন।




Facebooktwitterredditpinterestlinkedinby feather
Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।