ডেস্ক,১০ জুন : সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সেটা মিমাংসা না করেই জেলা কোটা পুনঃনির্ধারণ করল সরকার। বিভিন্ন সময়ে মেধা কোটা বাড়ানোর দাবি উঠলেও এবার সেদিকে না গিয়ে শুধুমাত্র জেলা কোটা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। মেধার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়েও তর্ক আছে। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পূরণ হয় না। কিন্তু প্রশাসনিক আদেশে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণ না হলে সেক্ষেত্রে পদ শূন্য রাখা হয়। অবশ্য ক্ষেত্রবিশেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে মেধা বা অন্যান্য কোটায় অগ্রগামীদের মধ্যে থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটার শূন্য পদ পূরণ করা হয়ে থাকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরিতে জেলার কোটা পুনঃনির্ধারণ করে আদেশ জারি করে। এ প্রসঙ্গে সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, জেলা কোটা পুনর্বিন্যাস সম্পর্কিত আদেশ তিনি পাননি। তবে এখন পর্যন্ত ২০০১ সালের জনসংখ্যার ভিত্তিতে করা জেলা কোটা অনুসরণ করেই নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে জনসংখ্যা কোথাও হ্রাস বা বৃদ্ধি হতে পারে। সে বিবেচনায় সর্বশেষ পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিয়ে জেলা কোটা পুনর্বিন্যাস হওয়া প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে এখন মেধা কোটা ৪৫ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা ৩০, জেলা ১০, নারী ১০ এবং উপজাতি কোটা ৫ শতাংশ। ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে এক শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে। সাধারণত সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত, বিভিন্ন করপোরেশন ও দফতরে সরাসরি নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলাওয়ারি কোটা পুনঃনির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ২০১১ সালে আদমশুমারির নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া, বিভিন্ন জেলার জনসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি এবং নতুন করে দুটি বিভাগ সৃষ্টি হওয়ায় জেলাওয়ারি পদ বিতরণের শতকরা হার পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন আদেশ জারি হওয়ায় আগের জেলা কোটার হার বাতিল বলে গণ্য হবে। নতুন আদেশে দেখা যাচ্ছে, জনসংখ্যা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ঢাকা জেলার জন্য সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং বান্দরবান জেলার জন্য সবচেয়ে কম শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
জেলাভিত্তিক কোটার হার
ঢাকা বিভাগ: ঢাকা জেলা ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, গাজীপুর ২ দশমিক ৩৬, মানিকগঞ্জ শূন্য দশমিক ৯৭, মুন্সীগঞ্জ এক শতাংশ, নারায়ণগঞ্জ ২ দশমিক ০৫, নরসিংদী ১ দশমিক ৫৪, ফরিদপুর ১ দশমিক ৩৩, গোপালগঞ্জ শূন্য দশমিক ৮১, মাদারীপুর শূন্য দশমিক ৮১, রাজবাড়ী শূন্য দশমিক ৭৩, শরিয়তপুর শূন্য দশমিক ৮০, কিশোরগঞ্জ ২ দশমিক ০২ এবং টাঙ্গাইল ২ দশমিক ৫০ শতাংশ কোটা পেয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগ: জনসংখ্যা অনুযায়ী ময়মনসিংহ ৩ দশমিক ৫৫, জামালপুর ১ দশমিক ৫৯, নেত্রকোণা ১ দশমিক ৫৫ এবং শেরপুর জেলা শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ কোটা পেয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগ: চট্টগ্রাম ৫ দশমিক ২৯, বান্দরবান শূন্য দশমিক ২৭, কক্সবাজার ১ দশমিক ৫৯, ব্রাহ্মবাড়িয়া ১ দশমিক ৯৭, চাঁদপুর ১ দশমিক ৬৮, কুমিল্লা ৩ দশমিক ৭৪, খাগড়াছড়ি শূন্য দশমিক ৪৩, ফেনী এক শতাংশ, লক্ষ্মীপুর ১ দশমিক ২০, নোয়াখালী ২ দশমিক ১৬ এবং রাঙ্গামাটি জেলায় শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগ: রাজশাহী ১ দশমিক ৮০, জয়পুরহাট শূন্য দশমিক ৬৩, পাবনা ১ দশমিক ৭৫, সিরাজগঞ্জ ২ দশমিক ১৫, নওগাঁ ১ দশমিক ৮১, নাটোর ১ দশমিক ১৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১ দশমিক ১৪ এবং বগুড়া জেলা ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ কোটা পেয়েছে।
রংপুর বিভাগ: রংপুর জেলা ২ শতাংশ, দিনাজপুর ২ দশমিক ০৮, গাইবান্ধা ১ দশমিক ৬৫, কুড়িগ্রাম ১ দশমিক ৪৪, লালমনিরহাট শূন্য দশমিক ৮৭, নীলফামারী ১ দশমিক ২৭, পঞ্চগড় শূন্য দশমিক ৬৯ ও ঠাকুরগাঁওয়ের কোটা শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ।
খুলনা বিভাগ: খুলনা ১ দশমিক ৬১, যশোর ১ দশমিক ৯২, ঝিনাইদহ ১ দশমিক ২৩, মাগুরা শূন্য দশমিক ৬৪, নড়াইল শূন্য দশমিক ৫০, বাগেরহাট ১ দশমিক ০২, সাতক্ষীরা ১ দশমিক ৩৮, চুয়াডাঙ্গা শূন্য দশমিক ৭৮, কুষ্টিয়া ১ দশমিক ৩৫ এবং মেহেরপুর জেলা শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ কোটা পেয়েছে।
বরিশাল বিভাগ: বরিশাল ১ দশমিক ৬১, ভোলা ১ দশমিক ২৩, ঝালকাঠি শূন্য দশমিক ৪৭, পিরোজপুর শূন্য দশমিক ৭৭, বরগুনা শূন্য দশমিক ৬২ এবং পটুয়াখালী ১ দশমিক ০৭ শতাংশ কোটা পেয়েছে।
সিলেট বিভাগ: সরকারি চাকরিতে নিয়োগে সিলেটে ২ দশমিক ৩৮, মৌলভীবাজারে ১ দশমিক ৩৩, সুনামগঞ্জে ১ দশমিক ৭১ এবং হবিগঞ্জের জন্য ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ জেলা কোটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।