দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে সামগ্রিক হিসেবে নাজুক অবস্থায় রয়েছে নারী শিক্ষকদের অবস্থান। বর্তমানে দেশের শিক্ষালয়গুলোতে মোট শিক্ষকের মাত্র ২৮ দশমিক ২২ শতাংশ।
সে হিসেবে দেশের শিক্ষালয়গুলোতে নারী শিক্ষকরা পিছিয়ে রয়েছে পুরুষ শিক্ষকদের তুলনায়। বর্তমানে দেশের মাধ্যমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত পুরুষ শিক্ষকের হার ৭১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
তবে বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা গেছে দেশের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বর্তমানে দেশের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষালয়গুলোতে শিক্ষকতায় রয়েছেন সবচেয়ে বেশি নারী। পরিসংখ্যান মতে—এ হার ৭২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিপরীতে এ খাতে পুরুষ শিক্ষকের হার মাত্র ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) অডিটোরিয়ামে বার্ষিক শিক্ষাগত পরিসংখ্যানের উপর আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এরপর প্রাথমিকভাবে প্রস্তুতকৃত এসব তথ্য চূড়ান্ত আকারে প্রকাশ করবে প্রতিষ্ঠাটি।
বর্তমানে দেশের ১২৩টি ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিকে ব্যানবেইস বলছে, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষালয়গুলোর মোট ৫ হাজার ৮৭৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ হাজার ২৬১ জনই নারী। বিপরীতে মাদ্রাসায় কর্মরত ১ লাখ ১৮ হাজার ২৮০ জন শিক্ষকের মধ্যে নারী শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২৩ হাজারা ১৫৬ জন।
বার্ষিক শিক্ষা পরিসংখ্যানে জানানো হয়েছে, দেশের প্রচলিত শিক্ষা স্তরভিত্তিক কাঠামোয় সবচেয়ে কম নারী শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষায়। ধর্মীয় আবহে পরিচালিত এ শিক্ষালয়গুলোয় নারী শিক্ষকের উপস্থিতি বর্তমানে মাত্র ১৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বিপরীতে এ খাতে দেশের যেকোনো শিক্ষাস্তর বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি ৮১ দশমিক ৪২ শতাংশ পুরুষ শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন।
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বর্তমানে ছেলে শিক্ষার্থীদের চেয়েও বেশি উপস্থিতি রয়েছে মেয়ে শিক্ষার্থীদের। বর্তমানে দেশের ছেলে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছাড়িয়েছে নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। এখন দেশের শিক্ষালয়গুলোতে মেয়ে শিক্ষার্থীদের হার ৫০ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছেলে শিক্ষার্থীর হার ৪৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ—জানানো হয়েছে একই পরিসংখ্যানে।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে অপেক্ষামানদের ভর্তির জন্য করনীয় কী?
পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে মাধ্যমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৫ হাজার ৬২৬টি। এর মধ্যে ২ হাজার ৬৩৮টি প্রতিষ্ঠান সরকারি এবং বেসরকারি খাতে রয়েছে মোট ৪২ হাজার ৯৮৮টি শিক্ষালয়। অর্থাৎ দেশে সরকারি উদ্যোগের চেয়েও ১৬ গুণ বেশি রয়েছে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
দেশে বর্তমানে মাধ্যমিক স্তর থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৯৫ জন। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ৫০ দশমিক ৫২ শতাংশ, সংখ্যার হিসেবে যা ৫২ লাখ ১ হাজার ৮৯০ জন। বিপরীতে ছেলে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৫০ লাখ ৯৪ হাজার ৮০৫। বর্তমানে দেশের শিক্ষালয়গুলোতে ছেলেদের চেয়ে ১ লাখ ৭ হাজার ৮৫ জন বেশি মেয়ে শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।
এছাড়াও বার্ষিক শিক্ষা পরিসংখ্যানে আরও তুলে ধরা হয়েছে, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক সংখ্যাও। এতে দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে মোট শিক্ষক রয়েছেন ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৩৯ জন। এর মধ্যে নারী শিক্ষকের সংখ্যা ১ লাখ ৮২ হাজার ২৮৮ জন; যা মোট সংখ্যার ২৮ দশমিক ২২ শতাংশ। সে হিসেবে দেশের শিক্ষালয়গুলোতে নারী শিক্ষকরা পিছিয়ে রয়েছে পুরুষ শিক্ষকদের তুলনায়। বর্তমানে দেশের মাধ্যমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত পুরুষ শিক্ষকের হার ৭১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।