দেশের দুই প্রজন্মের ক্রিকেট-প্রতিভূর মুখোমুখি কথাবার্তাটা ইডেন গার্ডেন্সে নয়, বাইপাসের ধারের টিম হোটেলে হয়ে গেল।
দুপুর বারোটা-সাড়ে বারোটার আশেপাশে। ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রিকেট আইকন ততক্ষণে চেক ইন করে নিজের রুমে চলে গিয়েছেন। বিকেলে বোর্ডের ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠকে যোগ দেওয়ার ব্যাপার আছে। কিন্তু দুপুর নাগাদ সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের ঘরে যিনি নক করলেন, বোর্ডের মহাকর্তা তিনি অবশ্যই নন।
ইনি— বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ আইকন। ইনি, বিরাট কোহলি। আপাতত তিনি সচিন তেন্ডুলকরের ঘরে।
শোনা গেল, কলকাতায় সংক্ষিপ্ত সফরের মধ্যেও সচিন চাইছিলেন কিছুটা সময় ভারতীয় টিমের জন্য বার করতে। এবং একই টিম হোটেলে লিটল মাস্টারকে পেয়ে যাওয়ায় ভারতীয় টিমের কেউ কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চলে যান। সর্বপ্রথম বিরাট। আর দিন চারেক বাদে ভারতের নির্বাচিত টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে জীবন শুরু হচ্ছে যাঁর। বুধবার ফাতুল্লাহর মাঠে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সচিনকে পাওয়া মাত্র বিরাট জানতেও চান যে, কোনও ভাবে বাংলাদেশে তিনি যাচ্ছেন কি না? উত্তরে সচিন নাকি বলেন, এটায় যাচ্ছেন না। কিন্তু সঙ্গে এটাও বলে দেন যে, টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে বিরাট যে ভাল করবেন সে ব্যাপারে তাঁর কোনও সংশয় নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার চলে আসেন রোহিত শর্মা এবং হরভজন সিংহ। দু’জনকে আলাদা আলাদা সময় দিয়ে শেষ পর্যন্ত সচিন নাকি বলেন দেন যে, তাঁদের যে কোনও দরকারে তিনি আগের মতোই আছেন। থাকবেন। একবার শুধু বললেই হবে!
|
বিসিসিআই বৈঠকে যোগ দিতে এসে কোহলিদের টিপস দিয়ে গেলেন সচিনও।
বিকেল পাঁচটা নাগাদ ইডেনে ভারতীয় টিমকে দেখা গেল, ঝরঝরে মেজাজে ফিটনেস টেস্ট দিতে নেমে পড়তে। সেটা তেন্ডুলকর-প্রাপ্ত মানসিক টোটকা না অন্য কিছু, বলা সম্ভব নয়। বলা সম্ভব ছবিটা। যা আসন্ন বাংলাদেশ সফরের আগে বিরাট কোহলির ভারতের মননকে ব্যাখ্যা করে দেবে।
একশো মিটার স্প্রিন্ট শেষ করে কোহলি খোঁজ নিচ্ছেন তাঁর সময়টা কত? কত সেকেন্ড? সঙ্গীদের হারাতে পারলেন কি না? জিতেছেন শুনে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্ত।
ড্রেসিংরুমে অজিঙ্ক রাহানে আবিষ্কার করছেন, তাঁর জন্মদিনের কেকের প্রথম টুকরোটা ক্যাপ্টেনকে খাওয়ানোর আগেই কী করে তার কিছুটা চলে গিয়েছে শিখর ধবনের হাতে। শিখর দু’হাতে সেটা মাখিয়ে ওঁত পেতে রাহানের ঠিক পিছনে!
ওয়াকার হাতে মহম্মদ শামি বসে আছেন ড্রেসিংরুমের বাইরে। টিমে নেই। তবুও।টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী এ দিন এক সাক্ষাৎকারে বলে দিয়েছেন যে, টিমটার সবচেয়ে পরিবর্তন হয়েছে দু’টো ব্যাপারে। এক, নিজেদের প্রতি আস্থায়। আর অ্যাটিটিউড। শাস্ত্রী ভুল কিছু বলেননি। একটা ফিটনেস টেস্টকে ঘিরে টিমে যে সিরিয়াস মনোভাব দেখা গেল, তাতে পরবর্তী ব্যাপারস্যাপারে টিম মনন কী থাকতে পারে, আন্দাজ পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলছিলেন, গত অস্ট্রেলিয়া সফর এবং বিশ্বকাপে চোট-আঘাত প্রবল ভুগিয়েছে টিমকে। কাঠগড়ায় যাঁকে তখন তোলা হয়েছিল, সেই ফিজিও নীতিন পটেলকে এ দিন দেখা গেল টিমের সঙ্গে। ইস্তফা দিলেও তাঁকে নাকি বলা হয়েছে কিছু দিন টেনে দিতে। যত দিন পরিবর্ত কাউকে না পাওয়া যায়। নীতিন আপাতত আছেন ঠিকই, কিন্তু ফিটনেস-নীতি পাল্টে ফেলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সম্পূর্ণ ফিট না হলে কোনও ক্রিকেটারকে আর বিদেশে পাঠানো হবে না। আধা-ফিট তত্ত্বের আর কোনও জায়গা নাকি নেই।
কেএল রাহুল যেমন। অসুস্থ বলে কলকাতার ফিটনেস টেস্টে আসেননি কর্নাটকী ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশ যাওয়া তাঁর হচ্ছে না। শুধু তিনি নন, একটা টেস্ট বলে তাঁর পরিবর্তও পাঠাবে না ভারতীয় বোর্ড।সুত্র: আনন্দবাজার