শিক্ষক নিয়োগ : শূন্যপদের তথ্য সংশোধন যেভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক | ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। বেশকিছু প্রতিষ্ঠান থেকে শূন্যপদের ভুল তথ্য দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বা ডিইওদের শূন্যপদের তথ্য যাচাই ও সংশোধনের দায়িত্ব দিয়েছে এনটিআরসিএ। ৩১ জানুয়ারি থেকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা শূন্যপদের তথ্য সংশোধন করতে পারছেন। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শূন্যপদের তথ্য যাচাই ও এডিট করার সুযোগ পাচ্ছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। গত ৬ ফেব্রুয়ারি শূন্যপদের তথ্য সংশোধনের সময় বাড়ায় এনটিআরসিএ। আর শূন্যপদের তথ্য সংশোধনে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের তৎপর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা।
এদিকে শূন্যপদে তথ্য সংশোধন প্রতিষ্ঠান প্রধান ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। নির্দেশনা শূন্যপদের তথ্য সংশোধনের প্রক্রিয়া বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি নির্দেশনা জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়।

এনটিআরসিএ‌‌র নির্দেশনায় বলা হয়, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকার অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদাপত্র যাচাই করে যেগুলোর সংশোধন প্রয়োজন মনে করবেন, সেগুলো প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দিয়ে সংশোধন করাবেন। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব চাহিদাপত্র সংশোধন করতে হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা নিজ নিজ ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে (http://ngi.teletalk.com.bd) লগইন করে Edit Option এ গিয়ে চাহিদাপত্র সংশোধন করতে পারবেন।

প্রতিষ্ঠানে থেকে পাওয়া সংশোধিত চাহিদা পত্রের কপি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা প্যানেলে দেখতে পারবেন। চাহিদাপত্র যাচাইয়ের পর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিজ নিজ প্যানেল পেইজের নিচের Save and Submit button এ ক্লিক করে চাহিদাপত্র চূড়ান্তভাবে সাবমিট করতে পারবেন। শূন্য পদে তথ্য সংশোধনের প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে অনুসরণের জন্য অনুরোধ করেছে এনটিআরসিএ।

এনটিআরসিএর একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাবার্তা ডটকমকে বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান এবারো শূন্যপদের তথ্য পাঠিয়েছেন। তবে, এবার সংখ্যাগত ভুল বেশি হয়েছে। আর অন্যান্য ভুল কিছুটা হলেও কম হয়েছে। হয়তো ১ জন শিক্ষক লাগবে সেখানে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান তিনজন শিক্ষকের চাহিদা দিয়েছেন। এসব ভুল সংশোধনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান শূন্যপদে তথ্য দিতে ভুল করেছেন, তারা জেলা শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করে এসব ভুল সংশোধন করতে পারবেন। তবে, এবার প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এসব ভুল সংশোধনে তৎপর হবে। কারণ শিক্ষক নিয়োগের সময় শূন্যপদের তথ্য ভুল থাকলে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা।

তারা দৈনিক শিক্ষাবার্তা ডটকমকে আরও বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান শূন্যপদের ভুল তথ্য দিলে সে পদে সুপারিশ করা প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে হবে। প্যাটার্নের অতিরিক্ত শূন্যপদের চাহিদা দিলে শিক্ষকের শতভাগ বেতন প্রতিষ্ঠান থেকে দিতে হবে। তা না হলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের এমপিও বন্ধ করা হবে। আর কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমপিও নীতিমালায়ও এমনটি বলা আছে।

গত শিক্ষক নিয়োগে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শূন্যপদের ভুল তথ্য দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় প্রার্থীদের। এ জটিলতা নিরসনে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে দৈনিক শিক্ষাবার্তা ডটকমকে নিশ্চিত করেছে এনটিআরসিএ। শূন্যপদের ভুল তথ্যের ভোগান্তি এড়াতে এবার ই-রিকুইজিশন যাচাই বাছাইয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। এদিকে এনটিআরসিএ সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, শূন্যপদের তথ্য যাচাই বাছাইয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা নিজ নিজ ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ভুল তথ্য পাঠালে তা সংশোধন করতে পারবেন।

বিষয়টি নিশ্চিত এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাবার্তা ডটকমকে বলেন, প্রতিষ্ঠান থেকে ই-রিকুইজিশনে চাওয়া শূন্যপদের তথ্য ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জারি করা এমপিও নীতিমালা বা জনবল কাঠামো অনুযায়ি কম-বেশি হলে তা সংশোধন করার ক্ষমতা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের দেয়া হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান শূন্যপদে তথ্য দিতে ভুল করেছে তারা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে যেসব ভুল সংশোধন করতে পারবেন। জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্যপদের তথ্য যাচাই করবেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তথ্য সঠিক থাকে তা সঠিক বলে সাবমিট দিবেন তিনি। আর তথ্যে কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধন করে এনটিআরসিএতে সাবমিট করবেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা।

তিনি দৈনিক শিক্ষাবার্তা ডটকমকে আরও জানান, ৩১ জানুয়ারি থেকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা শূন্যপদের তথ্য সংশোধন করতে পারেছেন। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শূন্যপদের তথ্য যাচাই ও এডিট বা সংশোধন করতে পারবেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। নিজ নিজ ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে লগইন করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শূন্যপদে তথ্য যাচাই ও সংশোধন করবেন। এই সময়ের মধ্যে শূন্যপদের তথ্য যাচাই ও সংশোধনের কাজ অবশ্যই শেষ করতে হবে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের যাচাই করা পদগুলো সঠিক বলে বিবেচনা করবে এনটিআরসিএ। সে অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানা থাকলে এনটিআরসিএর অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। অফিস চলাকালীন ০২-৪১০৩০৩৯৩ টেলিফোন নম্বরে ফোন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

গত ১৪ জানুয়ারি থেকে তৃতীয় চক্রে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ বা ই-রিকুইজিশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ই-রিকুইজিশন প্রক্রিয়া চলার কথা থাকলেও এ সময় বাড়ায় এনটিআরসিএ। গত ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ই-রিকুইজিশন বা শূন্যপদের তথ্য দিতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করে এনটিআরসিএ। বাছাই করা প্রার্থীদের আর কোনও পরীক্ষা দিতে হয় না। ইতোমধ্যে দুইটি চক্রে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থী সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় চক্রে শিক্ষক নিয়োগ দিতে কার্যক্রম শুরু করেছে এনটিআরসিএ।
e req



Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।