রিং আইডি : গ্রাহকদের ৮০০ কোটি টাকার কী হবে

Image

‘টিভি, মিডিয়া সবাই ই-কমার্সের দুর্নীতি খোঁজে। কিন্তু মাঝ দিয়ে যে রিং আইডি দেড়-দুই লাখ গ্রাহকের কয়েক শ কোটি টাকা হাতিয়ে নিল, সেটা নিয়ে কারও কথা নাই।’ এমন আক্ষেপ রিং আইডির ভুক্তভোগী গ্রাহক জাহিদ হোসাইনের।

আরো পড়ুন: ট্রেনে অনলাইন টিকিটের সুফল পাচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা

কোভিডজনিত সংকটকালে ২০২১ সালের জুনে জীবিকার তাগিদে ৩৬ হাজার টাকায় রিং আইডি কমিউনিটি জবের দুটি সদস্য পদ কিনেছিলেন জাহিদ। প্রথমে কিছুদিন কিছু টাকা আয় করেছিলেন। মাস তিনেকের মধ্যে রিং আইডি জানায়, কিছুদিনের মধ্যেই তারা নতুন সদস্য পদ বিক্রি বন্ধ করে দেবে। যাঁরা আইডি কিনতে চান, তাঁরা যেন দ্রুত কিনে ফেলেন। তখন জাহিদ ও তাঁর স্ত্রীর সঞ্চয়ের টাকায় আরও ৯টি আইডি কিনে ফেলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই দেখতে পান, তাঁদের অ্যাপে জমা হওয়া টাকা আর তুলতে পারছেন না। তত দিনে তাঁরা বিনিয়োগ করে ফেলেছেন ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
এই দম্পতির মতোই কোভিডকালে ঘরে বসে আয় করতে লাখো মানুষ রিং আইডিতে বিনিয়োগ করেছিলেন। তাঁরা সেই টাকা আর ফেরত পাননি।

পরিচালক ধরা পড়লেও এখন লাপাত্তা
২০১৫ সালে রিং আইডি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরে তারা বৈদেশিক বিনিয়োগ ও কমিউনিটি জবসের মাধ্যমে বিনিয়োগ সংগ্রহ শুরু করে। রিং আইডির মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফুল ইসলাম। তাঁর স্ত্রী আইরিন ইসলাম ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এই দম্পতি কানাডায় বসবাস করছেন। রাজধানীর নিকেতনে অফিস নিয়ে পরিচালক হিসেবে রিং আইডির কার্যক্রম দেখভাল করতেন শরীফুল ইসলামের ভাই সাইফুল ইসলাম। ২০২১ সালের ১ অক্টোবর সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে এখন সাইফুল কোথায় সেই তথ্য তাদের কাছে নেই।

রিং আইডির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক সোহেল রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তদন্ত শেষে ২০২২ সালের আগস্টে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছি। এরপর রিং আইডি বা সাইফুলের বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। তবে সাত-আট মাস কারাগারে থাকার পর তিনি জামিন পেয়েছেন বলে জেনেছি।’

সিআইডির তথ্যমতে, রিং আইডির গ্রাহকসংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার। তবে গ্রাহকদের মোট পাওনার পরিমাণ জানাতে পারেনি সংস্থাটি। অন্যদিকে গ্রাহকদের দাবি, রিং আইডির গ্রাহক প্রায় দুই লাখ। তাঁদের পাওনার পরিমাণ ৮০০ কোটি টাকার মতো। গ্রাহকদের অভিযোগ, ইভ্যালিসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের টাকা ফিরিয়ে দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল উদ্যোগ নিলেও রিং আইডির বিষয়ে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের উপসচিব মুহাম্মদ সাঈদ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা শুধু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর টাকা ফেরত নিয়ে কাজ করছি। রিং আইডি ই-কমার্স কি না, সেই সিদ্ধান্তে আমরা এখনো আসতে পারিনি।’

পেমেন্ট গেটওয়েতে রিং আইডির টাকা নেই

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হয় ডিজিটাল কমার্স সেলের তত্ত্বাবধানে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের তালিকায় নেই রিং আইডির নাম। এ বিষয়ে সাঈদ আলী জানান, পেমেন্ট গেটওয়েতে রিং আইডির কোনো টাকা জমা নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় তাদের কিছু টাকা ফ্রিজ অবস্থায় আছে।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘আইন অনুযায়ী আমরা ছয় মাস অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ রাখতে পারি। রিং আইডির মামলা চলায় তাদের অ্যাকাউন্ট এখনো ফ্রিজ আছে।’

৩ মাসেই সংগ্রহ ২০০ কোটি টাকার বেশি
সিআইডির তথ্যমতে, রিং আইডি ২০২১ সালের মে মাসে ২৩ কোটি ৯৪ লাখ, জুনে ১০৯ কোটি ৯৩ লাখ এবং জুলাইয়ে ৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা সংগ্রহ করে। সিআইডি রিং আইডির পাঁচটি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পায়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব ব্যাংক হিসাবে ৩৭৭ কোটি জমা হয়। একই সময়ের মধ্যে ৩০২ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়। সিআইডি জানতে পারে, রিং আইডির ৩৭ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

জানা যায়, এজেন্টদের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে রিং আইডি। এজেন্ট মোহাম্মদ রায়হান বলেন, ‘টাকার জন্য সবাই আমাদের এসে ধরে। অথচ আমরা নিজেরাও ভুক্তভোগী। আমরা কার কাছে যাব? ই-কমার্স নয় বলে কেউ আমাদের কথা শোনে না।’

বাংলাদেশ ই-কমার্স কনজ্যুমার সোসাইটির সভাপতি বেলাল হোসাইন জুবায়ের বলেন, ‘রিং আইডি ই-কমার্স ছিল না। তাই আমাদের আওতায় এটা আসে না। তারপরও আমরা রিং আইডির বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি।’

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।