৬ মে : মাগুরা শহরের ভায়নার মোড়ে আছিয়া খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলছে ১৭০ শিশুর পাঠদান। যেকোনও সময় ভবনটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকলেও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় আতঙ্কের মধ্যেই শিশুদের পাঠদান চলছে বলে জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
শিক্ষক ও ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-যশোর মহাসড়কের পাশের স্কুল ভবনটিতে ১৭০ ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে। ১৯৯৪ সালে ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্টের আওতায় এই বিদ্যালয়ের মূল ভবনটি তৈরি হয়। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই বিদ্যালয়ের ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়তে থাকে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অবকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে ভবনটির। কয়েক বছর আগে ছাদের আরসিসি পিলারের ক্ষয়ে যাওয়া জায়গাগুলো সামান্য প্লাস্টারের মাধ্যমে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে তাতেও কোনও লাভ হয়নি।
দুর্বল অবকাঠামোর কারণে সব শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে গেছে। ফাটলও দেখা দিয়েছে ছাদে। বৈদ্যুতিক ফ্যানের ভেতরে পানি ঢুকে আটটি ফ্যানই পুড়ে গেছে। এ কারণে ফ্যান ছাড়াই প্রচণ্ড গরমের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
এদিকে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষার শুরু থেকেই স্কুল মাঠটি পানি ও কাদায় ডুবে আছে। বেশি বৃষ্টি হলে মাঠ উপচে ক্লাসরুমে ও লাইব্রেরি রুমে পানি ঢুকে পড়ে।
বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া, মুন্নি খাতুন ও মায়া খাতুন, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র হৃদয় হোসেন জানায়, যেকোনও সময় ছাদ থেকে পলেস্তরা খসে আহত হওয়ার ভয়েই ক্লাস করতে হচ্ছে। ফ্যান না চলায় গরমে সবার কষ্ট হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে ক্লাসরুমে জমে যায়।
ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, পুরো বর্ষাকাল জুড়ে স্কুলমাঠ পানি ও কাদায় ভরে থাকে। তাই ক্লাস না থাকলেও ক্লাসরুমেই বসে কাটাতে হয়। এজন্য অনেকেই স্কুলে ঠিকমত আসে না।
অভিভাবক রিপন হোসেন, নান্নু মিয়া, নিজাম মিয়া, আশরাফুল ইসলাম, আঙ্গুর বেগম, হালিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘স্কুল ভবনটির জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকি। ভবনটি যে শিক্ষার্থীদের মাথার ওপর ভেঙে পড়তে পারে তা দেখার কেউ নেই।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেফালী রানী বিশ্বাস বলেন, ‘ভবনের চারটি রুমের সব ক’টিতেই ছাদের পলেস্তরা ও ইটের খোয়া খসে পড়েছে। যেকোনও সময় পুরো ভবনটি ধসে পড়তে পারে। ১৭০ জন ছাত্রছাত্রী ও ছয় শিক্ষকের প্রাণহানির আশঙ্কাও রয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে এ সমস্যা নিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও লাভ হয়নি। স্কুল ভবনের যে অবস্থা, তাতে যেকোনও সময় আমরা রানাপ্লাজার মতো ভায়বহ আরেকটি দুর্ঘটনার শিকার হতে পারি।’
প্রধান শিক্ষক জানান, স্কুলের মাঠের পানি বের করে দেওয়ার জন্য পৌরসভার মেয়রকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। খেলাধুলাও করতে পারছে না ছাত্রছাত্রীরা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম এ বিষয়ে বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টি ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা ঝুঁকি নিয়েই এখানে ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই স্কুলসহ জরুরি ভিত্তিতে ভবন নির্মাণের জন্য ১০টি স্কুলের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে এলজিইডির মাগুরা সদর উপজেলা প্রকৌশলী আনন্দ কুমার ঘোষ বলেন, ‘ভবনকে ঝুঁকিমুক্ত না করে ক্লাসে ছাত্রদের লেখাপড়া করানো মোটেই ঠিক হচ্ছে না। আমরা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।’