ব্লু–লাইট চশমা মোবইল-কম্পিউটারের রশ্মি থেকে রক্ষায় কতটা কার্যকর?

Image

বর্তমানে না চাইলেও দিনের দীর্ঘ একটা সময় মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ আধুনিক ডিভাইস নিয়ে থাকতে হয়। বেশির ভাগ মানুষের কাজের মাধ্যমই হচ্ছে এই ডিজিটাল পর্দা। মানুষের কাজকে যেমন সহজ করেছে এই ডিজিটাল পর্দা তেমনি ক্ষতি করছে চোখের। দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের বড় ধরণের সমস্য হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্ক্রিনের নীল আলো তথা ব্লু লাইট থেকে চোখকে বাঁচাতে তৈরি করা হয়েছে ব্লু-লাইট-ফিল্টারিং গ্লাস। বলা হয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ল্যাপটপ বা ফোনে থাকার পর চোখ ঝাপসা হয়ে যাওয়ার অনুভূতি থেকে রেহাই দিতে সাহায্য করে এ ধরনের চশমা। কিন্তু সত্যিই কি ব্লু লাইট থেকে রক্ষা করতে পারে এ চশমাগুলো? এ দাবির পক্ষে খুব একটা শক্তিশালী প্রমাণ কিন্তু নেই। আর সম্প্রতি ১৭টি গবেষণা নিয়ে করা নতুন একটি পর্যালোচনাও বলছে, এসব চশমা চোখের ওপর চাপ কমাতে খুব সম্ভবত তেমন কোনো ভূমিকা রাখে না।

আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় অবস্থান করা নীল আলো আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে। সূর্য থেকেও নীল আলো নিঃসৃত হয়। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে অনেক বিশেষজ্ঞই ‘কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম’-এর জন্য নীল আলো দায়ী কি না তার উত্তর খুঁজেছেন।

আরো পড়ুন: রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমালে পাবেন যে ৬ উপকার

দীর্ঘক্ষণ ডিজিটাল ডিভাইসে থাকলে অনেকেই চোখে অস্বস্তি, ঝাপসা দৃষ্টি, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যায় ভোগেন যা কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম নামে পরিচিত। কিন্তু এর জন্য যে ডিজিটাল পর্দার নীল আলো দায়ী, এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা একমত হতে পারেননি।

ইউনিভার্সিটি অভ মেলবোর্ন-এর চোখ ও দৃষ্টিশক্তি বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ড. লরা ডাউনি এবং তার সহকর্মীরা তাদের নতুন একটি পর্যালোচনায় দেখেছেন, চোখের ওপর চাপ কমাতে চিরায়ত চশমার বদলে ব্লু-লাইট-ফিল্টারিং চশমা ব্যবহারের বিশেষ কোনো উপকারিতা নেই।

দ্য স্টেট ইউনিভার্সিটি অভ নিউ ইউর্ক কলেজ-এর অপটোমেট্রি বিভাগের অধ্যাপক মার্ক রোজেনফিল্ড বলেন, দীর্ঘ সময় ধরেই নীল আলো প্রতিরোধী চশমার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন বিজ্ঞানীরা। অতীতের অনেক গবেষণার পরিসর ছোট হলেও সেগুলোর অনেকগুলোতে দেখা গেছে, এ ধরনের চশমা ব্যক্তির চোখের অস্বস্তি কমায় না, দৃষ্টিশক্তিও বাড়ায় না।

ব্লু-লাইট-ফিল্টারিং চশমার সঙ্গে ঘুমের সংযোগ নিয়ে লরা ডাউনি ও তার দলের নতুন পর্যালোচনায় মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের চশমা ব্যবহারকারীদের ঘুম ভালো হয়। আবার অনেকগুলোতে বিপরীত ফলাফল দেখা গেছে।

ড. ডাউনি জানান, আমাদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলো থেকে বের হওয়া নীল আলোর পরিমাণ আদতে বেশ কম। তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এসব ডিভাইসে সময় পার করলে সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো হতে পারে।

ড. লরা ডাউনি ও অন্য বিশেষজ্ঞরা চোখের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করবে এমন কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

চোখের সিক্ততা ধরে রাখা
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের কোল আই ইনস্টিটিউট-এর চক্ষু বিশেষজ্ঞ ড. ক্রেইগ সি বলেন, আমরা যখন পর্দায় তাকিয়ে থাকি, তখন সাধারণ সময়ের তুলনায় কম পলক ফেলি। আর চোখ ব্যথা হওয়ার অন্যতম কারণ এটিও।

বেশিক্ষণ পর্দায় তাকিয়ে থাকলে চোখ তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। নিয়মিত চোখে অস্বস্তি হলে দৈনিক তিন–চারবার আইড্রপ ব্যবহারে পরামর্শ দিয়েছেন আমেরিকান অ্যাকাডেমি অভ অপথালমোলজি-এর মুখপাত্র এবং মিডওয়ে আই ইনস্টিটিউট-এর রেটিনা বিশেষজ্ঞ ড. রাজ মাতুরি।

‘চোখে কচকচে ভাব; মনে হচ্ছে চোখের ভেতর ধুলাবালি ঢুকেছে — কম্পিউটার ব্যবহারের পর এরকম অনুভূতি হলে আমি মানুষকে কম্পিউটারের সামনে বসার আগে প্রয়োজনে চোখে কয়েক ফোঁটা কৃত্রিম অশ্রু ঢেলে দেওয়ার পরামর্শ দিই,’ বলেন ইউনিভার্সিটি অভ মিশিগান-এর চক্ষুবিদ্যা ও ভিজ্যুয়াল বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ড. জোশুয়া এরলিচ।

কাজের ফাঁকে বিশ্রাম
চোখের যত্নে চক্ষু বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই ২০-২০-২০ নিয়ম অনুসরণের কথা বলেন। এ নিয়মটি হলো: কাজের সময় প্রতি ২০ মিনিট পরপর ২০ ফুট দূরের কোনো বস্তুর দিকে ২০ সেকেন্ড ধরে তাকিয়ে থাকা। এ ব্যায়ামের ফলে চোখের পেশিগুলো কিছুটা শিথিল হয় বলে জানান ড. মাতুরি। তবে কিছু গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ২০ সেকেন্ডের বিরতি এক্ষেত্রে হয়তো পর্যাপ্ত নয়।

ঔজ্জ্বল্য কমানো
কেবল কম্পিউটারের আলো নয়, পুরো ঘরের আলোর পরিমাণের কথাও মাথায় রাখতে হবে। ডিভাইসের পর্দার ওপর অন্য উৎস থেকে আসা আলোর প্রতিফলন ও আলোর তীব্রতাও চোখে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে বলে জানান ড. লরা ডাউনি। তাই কম্পিউটার এমনভাবে রাখতে হবে যাতে অন্য কোনো উৎস থেকে আসা আলো এর ওপর প্রতিফলিত হতে না পারে।

অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ
ড. ডাউনি কম্পিউটারের পর্দার কেন্দ্র একদম চোখ বরাবর না রেখে কিছুটা নিচে রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন। আর চোখে অস্বস্তিবোধ হলে কম্পিউটার নিজের মুখমণ্ডল থেকে আরও দূরে সরাতে হবে। সাধারণত মাথা আর কম্পিউটারের আদর্শ দূরত্ব ২০–৩০ ইঞ্চি।

ফোন প্রসঙ্গে ড. রোজেনফিল্ড বলেন, মুখের কাছাকাছি ফোন রাখলে তখন চোখকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। তার পরামর্শ, চোখ থেকে কমপক্ষে ১৬ ইঞ্চি দূরে ফোন রেখে ব্যবহার করতে হবে।

প্রয়োজনে চিকিৎসা নিন
যদি আপনি নিয়মিত চোখের অস্বস্তিতে ভোগেন এবং ওপরের পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করেও তিন–চার সপ্তাহের বেশি ভালো না থাকেন, তাহলে ড. মাতুরির পরামর্শ, আপনার দ্রুত একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত।

ঘুমের কী হবে?
কিছু স্মার্টফোন নির্দিষ্ট কয়েক ঘণ্টা পর এর পর্দাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উষ্ণ টোনে নিয়ে যায়। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অভ অপথালমোলজি এফ ডট লাক্স-এর মতো বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। এসব অ্যাপ ডিজিটাল ডিভাইসের পর্দার রং রাতের বেলা পরিবর্তন করে দেয়ে যা নীল আলোর নিঃসরণ কমাতে সহায়তা করে।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।