প্রাথমিকে ১৭০০ প্রধান শিক্ষকের পদ নেই। ২৬০০০ জাতীয়করন বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ পেল কিভাবে?

প্রায় ৮/১০ বছর আগে বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায় অন্তত ১৭১৯ জন। ২০১৩ সালের প্রথম দিকে ২৬ হাজার ২০০ স্কুলকে সরকার জাতীকরণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বছরই কয়েক ধাপে স্কুলগুলো জাতীয়করণ হয়েছিল। এরআগে থেকেই বঞ্চিত এসব শিক্ষক প্রায় ১০ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জাতীয়করণের পর থেকে এই ১ হাজার ৭১৯টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা নিজেকে সরকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে দিনক্ষণ গুনতে থাকেন।

তবে চলতি বছরের গত ১ ডিসেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ওই সকল স্কুলের ১৭১৯ জন প্রধান শিক্ষককে সহকারি শিক্ষক হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এখন সবাই অভিযোগ করে বলছেন, জাতীয়করণ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর জন্য ১ জন করে প্রধান শিক্ষক ও ৪ জন করে সহকারি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছিলো, কিন্তু এখন কি ওই সকল প্রধান শিক্ষকের পদগুলো হাওয়া হয়ে গেলো। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন আইনি বাধার কারণে এমনটি করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের পদ না পাওয়া বঞ্চিতদের অনেকেই ক্ষোভের সাথে বলছেন, যাদেরকে এতোদিন পরিচালনা করে আসলাম, আজ তাদের সমপর্যায়ে গিয়ে কাজ করতে হবে।

অথচ আমাদের যোগ্যতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সমপর্যায়ে। তবে কি কারণে এই পদ বঞ্চিত করা হলো। এর সঠিক সমাধানও চান বেশ কয়েক জন প্রধান শিক্ষক। রংপুর জেলার সদর থানার খইল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাধন শিক্ষক (বর্তমান সরকারি গেজেটে সহকারি শিক্ষক) মাসুদা খাতুন জানান, আমাদের যোগ্যতা আছে। প্রায় ৮ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছি কিন্তু এখন এসে আমার অধিকার কেনো কেড়ে নেয়া হলো বুঝলাম না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সঠিক সমাধান দাবি করেন তিনি।

কুড়িগ্রাম জেলার আব্দুল হাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (বর্তমান সরকারি গেজেটে সহকারি শিক্ষক) মো. সামসুল আলম জানান, সরকারি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আমাদের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে খর্ব করা হয়েছে। অথচ তৎকালীন ২০১৩ সালের ১৭ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যাচাই-বাছাই কমিটি আমাদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অধিভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেন। গাইবান্ধা জেলার জিল্লুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (বর্তমান সরকারি গেজেটে সহকারি শিক্ষক) জাহাঙ্গির আলম অভিযোগ করেন বলেন, আমাদের নায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা আমাদেরই সহকর্মীদের সঙ্গে সহকারি পদে গিয়ে কাজ করতে গিয়ে মনের মধ্যে অনেক হতাশা কাজ করছে। কি করব বুঝে উঠতে পারছি না।

তারা দাবী করেছে যদি আমাদের প্রধান শিক্ষক পদ না দেয়া হয় তবে তার আগে যাদেরকে প্রধান শিক্ষক পদ দেয়া হয়েছে তাদেরটা কিভাবে দেয়া হল এ প্রশ্ন এখন তাদের মুখে।

এ বিষয়ে আইনজীবী অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক উল্ল্যাহ মিয়া বলেন, ১৯৭৪ সালের অ্যাক্ট অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকরণ আইনে উনারা (প্রধান শিক্ষকরা) যে পদে ছিলেন পরবর্তিতে সেই পদ ফিরে পাওয়াই তাদের আইনগত অধিকার। উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর আন্দোলনের পর ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে লক্ষাধিক শিক্ষকের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ২৬ হাজার ২০০টি নিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিন ধাপে সরকারিকরণের ঘোষণা দেন। এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার শিক্ষক।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।